পাঠাগারগুলো পাঠক হারিয়ে ফেলছে কেন

প্রথম আলো তারিক মনজুর প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৫, ২১:১৫

দেশে বর্তমানে ৭১টি পাবলিক লাইব্রেরি আছে। এগুলো বাংলাদেশ গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এর বাইরে আরও অন্তত দুই হাজার গ্রন্থাগার আছে, যেগুলো বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। এসব গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। বই পড়ার গুরুত্ব সরকারের তরফ থেকে নানা সময়ে উচ্চারিত হয়। কিন্তু বই পড়াকে আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।


২৫ থেকে ৩০ বছর আগেও পাড়া-মহল্লায় ছোট ছোট পাঠাগার দেখা যেত। সেখানে বসে প্রবীণেরা পত্রিকা পড়তেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বসে বই পড়তে দেখা যেত। অনেকেই সদস্য হয়ে সেখান থেকে বই ধার করে ঘরে বসে পড়তেন। খুব অল্প টাকা দিয়েই এসব পাঠাগারের সাধারণ সদস্য বা জীবন সদস্য হওয়া যেত। সদস্য হওয়ার বিপরীতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার বই পড়ার সুযোগ থাকত। কিন্তু এখন এ ধরনের পাঠাগারগুলো জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। অসংখ্য পাঠাগার পাঠকের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।


বাস্তবতা এই, এখনকার শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ আর কোচিং-বাসার বাইরে সময় কাটানোর মতো অবসর পায় না। তাদের মধ্যে সাহিত্য-সংস্কৃতির আলাদা চর্চা তেমন চোখে পড়ে না। পাঠাগার না থাকার কারণে প্রবীণদের জন্যও পড়ার মধ্য দিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ ঘটে না। পাঠাভ্যাস কমে যাওয়ার পেছনে দায়ী করা হয় ইন্টারনেটকে। কিন্তু আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও যে উদ্যোগের ঘাটতি আছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।


দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি আছে। একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার বই ও পত্রিকা আছে। কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারেই আছে ৭ লাখের বেশি বই ও বাঁধাই করা সাময়িকী এবং ৬০ হাজারের মতো প্রাচীন পুঁথি ও দুষ্প্রাপ্য বই। তবে বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলোয় বসে শিক্ষার্থীদের বই বা পত্রিকা পড়তে দেখা যায় না। তরুণেরা সেখানে যান বিসিএস বা চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। গাইড বই পড়ার জন্য রীতিমতো আসন দখলের লড়াই চলে! এমনকি যাঁরা গবেষণাকাজ করেন, তাঁরাও পারতপক্ষে গ্রন্থাগার ব্যবহার করেন না। অনলাইন থেকে বইয়ের পিডিএফ কপি ব্যবহার করে কাজ সারতে চান।



সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কাজ দেশের পাঠাগারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করা। এটি পরিচালিত হয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন। এর কাজের মধ্যে আছে বেসরকারি পাঠাগারগুলোকে আর্থিক অনুদান দেওয়া ও বই প্রদান করা। নিবন্ধিত বেসরকারি পাঠাগারকে বছরে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দিয়ে থাকে গ্রন্থকেন্দ্র। এর মধ্যে অর্ধেক টাকার বই দেওয়া হয়, আর বাকি অর্ধেক টাকা নগদ দেওয়া হয়।


পাঠাগারগুলোর দাবি, বরাদ্দের টাকা তুলতে গিয়ে ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। তা ছাড়া এই স্বল্প বরাদ্দ দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো নতুন বই কেনা কিংবা পাঠাগারের সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হয় না। আর যেসব বই গ্রন্থকেন্দ্র থেকে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়, সেসব বই পড়ার ব্যাপারে পাঠকদের আগ্রহ থাকে না। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বই বা প্রকাশনী নির্বাচন করা হয়। তাই বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গ্রন্থকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদেরও যুক্ত করা দরকার। যেসব পাঠাগার অনুদান পাচ্ছে, সেগুলোর বাস্তব অবস্থাও যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে না গ্রন্থকেন্দ্র।


এমনও দেখা গেছে, যে পাঠাগারের নামে অর্থ বরাদ্দ নেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। কিংবা কোনো কোনো পাঠাগারের শুধু সাইনবোর্ড আছে। অথবা কোনো ব্যক্তির বসার ঘরের একটি সেলফেই পাঠাগার সীমাবদ্ধ! এভাবে পাঠাগারের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কথা পত্রিকার সংবাদে নানা সময়ে উঠে এসেছে। তাই অনুদান যাচাই-বাছাই করা কিংবা অর্থ বরাদ্দের আগে পাঠাগার পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকা উচিত।


জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের হিসাবে, দেশে তালিকাভুক্ত বেসরকারি পাঠাগার আছে প্রায় ১ হাজার ৩০০টি। এর মধ্যে কেবল গত অর্থবছরেই সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান পেয়েছে ৯২৩টি। মাস দুয়েক আগে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র নতুন তালিকাভুক্ত ৫৪টি পাঠাগার পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ১৯টিরই কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ ধরনের প্রতারণা থেকে মুক্তির জন্য এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করা দরকার, যার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত সব পাঠাগারের কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যালোচনা করা যায়।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও