
শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
কী হয় যদি শিশুর শৈশব সুন্দর হয়? আর কীইবা হয় যদি অসুন্দর হয়? শিশুদের শৈশবের স্মৃতি সুন্দর করে সাজাতে অভিজ্ঞজনেরা কেন এত জোর দেন? কেন শিশুকে প্রকৃতির মাঝে খেলার পরামর্শ দেওয়া হয়? কেন বলা হয় শিশুর শৈশবে মায়ের পাশাপাশি বাবার উপস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ?
কেন বেড টাইম স্টোরিজ-এর ওপর আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্টরা এত জোর দেন? কেন শিশুদের সময় দেওয়ার বিষয়টি বারবার আমাদের সামনে আসে? আসলে শিশুকে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে ভাবতে হয় নানা প্রসঙ্গকে ঘিরে। এর ভেতর একটা প্রসঙ্গ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ আর সেটা হলো ‘চমৎকার ইতিবাচক পরিবেশ’।
সেদিন পার্কে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়লো একজন মা তার সন্তানের সাথে খেলছেন। খেলার দৃশ্যটি বেশ মজার! শুধু ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া। খালি পায়ে! খুব সাধারণ একটি এক্টিভিটি কিন্তু শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে এই এক্টিভিটির ভূমিকা ব্যাপক। খালি পায়ে হাঁটা শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রাখে। প্রকৃতির সাথে শিশুর সরাসরি সংযোগ তৈরি হয়। এছাড়াও উন্নত সংবেদনশীল বিকাশ, দক্ষতা, শক্তিশালী পায়ের পেশিসহ ভারসাম্যের দিকটিও উন্নত হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো মায়ের সাথে প্রকৃতির মাঝে চমৎকার বন্ডিং! আমি দূর থেকে অনেকক্ষণ ওদের একসাথে সময় কাটানো দেখলাম।
শৈশবের ইতিবাচক স্মৃতি পরবর্তী জীবনে চমৎকার স্বাস্থ্য, আত্মসম্মানবোধ, জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি তৈরি করতে সাহায্য করে। এই স্মৃতিগুলো চমৎকারভাবে তৈরি করতে প্রয়োজন শিশুবান্ধব পরিবেশ। এখন প্রশ্ন হলো, শিশুবান্ধব পরিবেশের উপাদানগুলো কী? কী থাকলে বলা যায় পরিবেশটি শিশুর জন্য উপযুক্ত? কয়েকটা ঘটনা জানাই, যাতে শিশুদের বিষয়ে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে।
ঘটনা ১
একটি ছেলে চমৎকার ভাষাগত দক্ষতা নিয়ে পারিবারিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠছে। তার বয়স সাড়ে চার বছর। শিশুটির ভাষাগত দক্ষতা যতটা চমৎকারভাবে বেড়ে উঠেছে তার সামাজিক ও আচরণীয় দক্ষতা ঠিক ততটা ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। যেমন সে যখন দলীয় খেলায় অংশগ্রহণ করে সে খেলনা শেয়ার করতে চায় না।
যে খেলনাটি তার পছন্দ ঠিক সে খেলনাটি ছাড়া আর কোনো খেলনা নিয়ে খেলতে চায় না। কেউ যখন কথা বলে তখন নানা রকমের শব্দ করে কথার মাঝখানে বাধা সৃষ্টি করে। চারপাশের মানুষের প্রতি তার এমপ্যাথির জায়গা সুন্দরভাবে গড়ে ওঠেনি। এই ছেলেটির পরিবারের সাথে সরাসরি কথা বলে জানা গেলো সে বাড়িতেও এভাবেই আচরণ করে।
পরিবার থেকে ট্রিটমেন্ট বলতে যা করা হয় তা হলো, ওর অস্বাভাবিক আচরণ এড়িয়ে চলা। এড়িয়ে চলার কারণে ছেলেটি এখন সমাজে গ্রহণযোগ্য বা অগ্রহণযোগ্য আচরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখে না বা বলা ভালো তার পরিবেশের মানুষগুলোর কারণেই তার অগ্রহণযোগ্য আচরণগুলো আনএটেন্ডেড অবস্থায় থেকে গেছে!
ঘটনা ২
বয়ঃসন্ধিকালের একটি ছেলের মা জানালেন তার সন্তান সবসময় চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা রাখেন। ছেলেটির বাবা নেই। মা ছেলে মিলে চমৎকার সংসার সাজিয়ে নিয়েছেন। দুজনের মধ্যকার বন্ধন খুব ভালো। বেশ কয়েক বছর আগে গল্পে গল্পে তিনি জানিয়েছিলেন, দেশে চলমান কিছু প্রতিবাদ সভা, মিছিল ছেলেটিকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করে তুলেছে।
পড়াশোনায় মন একেবারেই নেই। নিজে থেকেই আন্দোলনে জড়িত হওয়ার কথা ভাবছে। ছেলেটির মা তার বিচলিত দশা আমার সাথে শেয়ার করেছিলেন। কী করে ছেলেটির মন পড়াশোনার দিকে ঘোরাবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না! অথচ সামনে তার পরীক্ষা! পরবর্তীতে অবশ্য জেনেছিলাম ছেলেটি খুব ভালোভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছে!
ঘটনা ৩
মেয়েটির বয়স সাত বছর। বেশ মেধাবী, সপ্রতিভ ও বুদ্ধিমতী। বাড়ির ছোট ও একমাত্র আদরের কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে বেশ আহ্লাদে বড় হচ্ছে। মেয়েটি তার বাবার প্রিন্সেস। একমাত্র ভাইয়ের সাথে সারাদিন জুড়ে চলে নানা রকমের খুনসুটি। পরিবেশের কারণেই তার মধ্যে কনফিডেন্স ডেভেলপ করেছে। এটা ইতিবাচক কিন্তু অতিরিক্ত আহ্লাদের কারণে কোনো সামাজিক পরিবেশে আচরণের মাত্রা চেতনা সম্পর্কে ধারণা ঠিক ততখানি ইতিবাচকভাবে গড়ে ওঠেনি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পরিবেশ
- বয়ঃসন্ধিকাল
- শিশুর বেড়ে উঠা