আমেরিকায় জোরালো হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের আন্দোলন

যুগান্তর আমেরিকা / যুক্তরাষ্ট্র আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৬

যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে আবার বিতর্ক দানা বেঁধে উঠেছে। দেশটির উত্তরে অবস্থিত বিশাল দেশ কানাডা এবং দক্ষিণে অবস্থিত মেক্সিকোতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও বেলারুশ ছাড়া সব দেশে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১১১টি দেশে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করা হয়েছে, ৫৫টি দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল রয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র যদি মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপ করে, তাহলে যেসব দেশে এখনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, সে দেশগুলোর অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ‘মানবাধিকারের মহান দেশ’ হিসাবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্র থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপ করার জন্য দাবি জানিয়ে এলেও দেশটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে যাচ্ছে।


সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনায় ফায়ারিং স্কোয়াডে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। লুইজিয়ানায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি, যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে, তিনি আরও মানবিক উপায়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আবেদন করেছেন। আর আইডাহো স্টেট মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রাথমিক উপায় হিসাবে ফায়ারিং স্কোয়াড ব্যবহারের আইন অনুমোদন করতে যাচ্ছে। এ তিনটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠনগুলো আবারও সোচ্চার হয়েছে দেশ থেকে মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণ বিলোপে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২৭টি স্টেটে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি স্টেটে মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত জুরিগণ, ২৩টি স্টেটে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার জন্য জুরিদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়।


কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে, যেমন রাষ্ট্রদ্রোহিতা, গুপ্তচরবৃত্তি, ব্যাপক পরিমাণে মাদক পাচারের মতো অপরাধের শাস্তি বিধানে স্টেটের এখতিয়ার নেই, এগুলো ফেডারেল অপরাধ হিসাবে গণ্য এবং ফেডারেল আইনে এসব অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে চূড়ান্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দিতে পারে ৬টি স্টেটের সর্বোচ্চ আদালত। এ স্টেটগুলো হচ্ছে-আরকানসাস, ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জিয়া, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি ও সাউথ ক্যারোলিনা। বড় ধরনের মাদক পাচারে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে দুটি স্টেট : ফ্লোরিডা ও মিজৌরি। বিমান হাইজ্যাকের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে জর্জিয়া ও মিসিসিপি। ভারমন্ট ১৯৬৫ সালে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করলেও রাষ্ট্রদ্রোহিতায় দায়ী ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দুটি স্টেট নেব্রাস্কা ও মন্টানা মৃত্যুদণ্ডের রায় দিতে জুরিদের ব্যবহার করে না। নেব্রাস্কায় তিনজন বিচারকের বেঞ্চ যদি অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদানে বাধা থাকে না। কিন্তু যদি তিনজনের মধ্যে একজন আপত্তি উত্থাপন করেন, সেক্ষেত্রে অভিযুক্তের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত হয়। অন্যদিকে মন্টানা যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র স্টেট, যেখানে বিচারিক আদালতের বিচারক একাই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিতে পারেন।



চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর সংখ্যা ২,০৯২, যার মধ্যে ৪৬ জন নারী। এসব অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে বিচারিক আদালত। আপিল আদালতে রায়ের হেরফের হতে পারে। অনেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তের রায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হতে পারে, অল্পকিছু অপরাধী উচ্চ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর সংখ্যা ছিল ২,২৮৩। কিন্তু আপিল আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হওয়ায় ২০২৪ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। অনেক সময় প্রেসিডেন্ট মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। যেমন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যিনি মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সোচ্চার এবং মৃত্যুদণ্ডের আওতা সম্প্রসারণের প্রবক্তা, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের তিন সপ্তাহ আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেডারেল আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪০ জনের মধ্যে ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেছেন, যারা এখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করবে। এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তার এখতিয়ারে দণ্ড মওকুফ করতে পারেন। মওকুফপ্রাপ্তরা পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, ফেডারেল ভূখণ্ডে হত্যা, ব্যাংক ডাকাতি, মাদক পাচার ও ফেডারেল স্থাপনায় প্রহরী বা বন্দিদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে তারা ফেডারেল আইনে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল। যে তিনজন বাইডেনের ক্ষমার আওতায় পড়েনি, তাদের একজন ২০১৫ সালে সাউথ ক্যারোলিনায় এক চার্চে গুলি করে নয়জন কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করেছিল। আরেকজন ২০১৩ সালে বোস্টন ম্যারাথন উৎসবে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল এবং তৃতীয়জন ২০১৮ সালে পিটসবুর্গে এক সিনাগগে হামলা চালিয়ে প্রার্থনারত ১১ জন ইহুদিকে হত্যা করেছিল, যেটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ভয়াবহতম সেমিটিক-বিরোধী হামলা।


মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করার পর্যায় পর্যন্ত আসা এক বিলম্বিত প্রক্রিয়া। ১৯৭৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১,৬১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, যাদের ১৮ জন নারী। ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদাররা যদিও ঢালাওভাবে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের সব অপরাধে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করে, কিন্তু বাস্তবে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ও দণ্ডপ্রাপ্ত অধিকাংশই শ্বেতাঙ্গ। যে ১৮ নারী অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তাদের মধ্যে ১২ জনই শ্বেতাঙ্গ। বিচারিক আদালতে কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হলেও উচ্চ আদালতে আপিল, এবং বিভিন্ন পর্যায়ে পর্যালোচনার পর রায় কার্যকর করায় দীর্ঘসূত্রতা একটি সাধারণ ব্যাপার। সে হিসাবে ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ৩৮ জন অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা। এর মধ্যে গত ৭ মার্চ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন শ্বেতাঙ্গ এবং তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ। আরও ১২ জন অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে কার্যকর হবে। তবে ২০ মার্চের মধ্যে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। গত বছরের (২০২৪) আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল বিভিন্ন স্টেট।


ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ইতোমধ্যে যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তাদের মধ্যে গত ৭ মার্চ সাউথ ক্যারোলিনায় ব্র্যাড সিগমনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তিন সদস্যের ফায়ারিং স্কোয়াডে। ২০০১ সালে সাবেক গার্লফ্রেন্ডের বাবা-মাকে বেসবল ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সিগমন ইলেকট্রিক চেয়ার বা প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশনে মৃত্যুর চেয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুবরণ করার আবেদন করার পর তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে সাউথ ক্যারোলিনায় ১৫ বছর পর কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও