নারীর প্রতি সহিংসতা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তার সঙ্গে আছে অধিকার বঞ্চনা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাপনা ও তার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ধর্মীয় গোঁড়ামি নারীকে প্রতি পদে পদে অবদমিত, লাঞ্ছিত করার অন্যতম কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ফলে নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, বৈষম্য ইত্যাদি নৃশংস ও মর্মান্তিক ঘটনা নারীর জীবনে অহরহ ঘটছে। এটা না বললেই নয় যে নারীর প্রতি সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করার নেপথ্যে যে কারণটি ভয়ংকর রকম ভূমিকা রাখছে সেটা হলো, ধর্ষণ প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য যে সেই স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়গুলোতে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক চর্চা জনগণের নিরাপত্তা দিতে ও স্বার্থ সংরক্ষিত করতে পারেনি। বরং রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে ঘুরেফিরে। যে দল যখন ক্ষমতায় আসীন হয়েছে, সেই দল কেবল নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পাঁয়তারা করেছে। ফলে তাদের ভাগ্য বদলেছে।
সাধারণ জনগণের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা কিংবা স্বার্থ, সেই অর্থে সুরক্ষিত হয়নি এহেন রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির কারণে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি তিলে তিলে ধ্বংস করেছে। এক কথায়, সাধারণ জনগণ অরক্ষিত থেকে গেছে, যার মধ্যে নারীরা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা, মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতায় নারীরা এগিয়ে গেলেও বৈষম্য তাদের পিছু ছাড়েনি। তার সঙ্গে যুক্ত থেকেছে নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা। যদিও বিভিন্ন সময়ে অপরাধ রোধে আইন প্রণয়ন হয়েছে কিন্তু তার প্রয়োগ ঘটেনি, ঘটতে দেখা যায়নি সেই অর্থে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক প্রভাবে ও ছত্রচ্ছায়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ছাড় পেয়ে গেছে বারবার। একটা পর্যায়ে রাজনীতি হয়ে ওঠে যাবতীয় অপরাধের আশ্রয়স্থল ও অভয়ারণ্য।