মোহাম্মদ আজম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। বর্তমানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। পিএইচডি করেছেন ‘বাংলা ভাষার উপনিবেশায়ন ও বি-উপনিবেশায়ন’ বিষয়ে। এছাড়া তার গবেষণায় প্রাধান্য পেয়েছে সাহিত্য, নন্দনতত্ত্ব, ইতিহাস, রাজনীতি ও সংস্কৃতি-অধ্যয়ন। বাংলা ভাষার প্রচার-প্রসার এবং বাংলা একাডেমির অবদান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবরিনা স্বর্ণা
ভাষা আন্দোলন থেকে এ পর্যন্ত দেশে-বাইরে বাংলা ভাষার প্রচার-প্রসার কতটা হলো?
ভাষার প্রচার ও প্রসার জোর করে হয় না। এর চাহিদা থাকতে হয়। একটা ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ রচনা থাকতে হয়। তার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকতে হয় এবং সে ভাষায় ভালো গবেষণা হতে হয়। তাহলেই কেবল ওই ভাষার প্রতি অন্য ভাষীরা মনোযোগী হন। তার পরও ভাষার প্রচার-প্রসারে নানা রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া হয়, যেন একটি ভাষা অন্যের কাছে পৌঁছায়।
আমাদের দেশের প্রধান ভাষা বাংলা। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরারও এটি প্রধান ভাষা। এর বাইরে আসামের অন্যতম ভাষা বাংলা। এছাড়া সারা বিশ্বে বাংলাভাষী মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সব মিলিয়ে বাংলা বিপুল জনগোষ্ঠীর ভাষা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা বাংলাকে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। এর অর্থ হলো, বাংলায় যদি বিপুল পরিমাণে আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো তাহলে মানুষ আর্থিক কারণে নিজেদের প্রয়োজনেই বাংলা শিখত। কিন্তু এটি আমরা করতে পারিনি। আরেকটি কারণেও বাংলা শেখার প্রয়োজন হতে পারত। বর্তমানে মানুষ তথ্য-প্রযুক্তির আবহে জীবনযাপন করে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষা অনূদিত হয়ে যায়। মানুষ এ কাজে তথ্য-প্রযুক্তির নানা উপকরণ ও উপায় ব্যবহার করছে। বাংলা ভাষা তেমন সন্তোষজনক পর্যায়েও পৌঁছাতে পারেনি, যে পরিমাণ উন্নয়ন হলে মেশিন-ট্রান্সলেশন হয় কিংবা সমধর্মী ব্যবহার সম্ভব হয়। এর অর্থ হলো বাংলা ভাষাকে নিয়ে পৃথিবীর অন্যত্র যাওয়ার বিষয়ে আমরা শোচনীয়ভাবে পিছিয়ে আছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি বরং বলব, বিষয়টি অন্যদিক থেকে বিবেচনা করা উচিত।