
প্রতিটি বিষয়ের একটা শেষ থাকতে হয়
আবুল কাসেম ফজলুল হক শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বাংলা একাডেমির সভাপতি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: বাংলাদেশের রাজনীতি রাজনৈতিক নেতাদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। আগে দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ক্রাইসিসের সময় সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা দখল করত। এ সময়ের অন্তর্বর্তী সরকারও সেনাবাহিনীর সরকার না। এ সরকার হলো সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সরকার।
বর্তমানে মানুষের কাছে নির্বাচনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কীভাবে খেয়ে-পরে বাঁচবে? এ আশঙ্কাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমাগত। সাধারণ মানুষ ক্রমাগত দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান খুব দুর্বল। অন্যদিকে কৃষকেরা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করছেন এবং শ্রমিকেরাও কলকারখানায় কাজ করছেন। এতে কৃষিতে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু রাজনীতিতে রাজনীতিবিদেরা কোনো উন্নতি ঘটাতে পারছেন
না। তাঁরা নিজেদের উন্নয়নের বিষয়টা বিবেচনায় নেননি। এ কারণে জনগণ থেকে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে ক্ষমতা চলে গেছে সুশীল সমাজের হাতে। এটাই হলো আমাদের দেশের এখনকার রাজনৈতিক বাস্তবতা।
এটা কী কারণে হলো?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: মানুষের অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে। আবার মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের ভালো গুণও থাকে। যেমন সাহস, বুদ্ধি ইত্যাদি। আবার শ্রম ও চিন্তাশক্তির জোরে মানুষ ভালো কাজ করতে পারে। ভালো ও মন্দের এই বিরোধ ব্যক্তি মানুষের মধ্যে আছে। যে কাজ করবে না বলে মানুষ প্রতিজ্ঞা করে, অনেক সময় সেই কাজ করে ফেলে। আবার অনেক সময় যে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করে, সেই কাজ করতে পারে না। এর মধ্যে কেউ কেউ ভালোটা অনেক বেশি করতে পারে এবং মন্দ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
তেমনি যাঁরা কোনো জাতি ও সমাজকে নেতৃত্ব দেবেন, তাঁদের হতে হবে উন্নত চরিত্রের, সাধারণ মানুষ যাতে তাঁদের কাজ আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করতে পারে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে গুণাবলি, সেটার কোনো চিন্তা ও চর্চা নেই। বহু বছর ধরে শুধু ভোটাভুটির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে তো রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ হবে না। এ ছাড়া এ দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে রাজনীতি কি ফিরে আসবে না? এ কারণে নির্বাচনের কথা জোরেশোরে বলা হচ্ছে। যদি রাজনীতিবিদের চরিত্র উন্নত না হয়, তাহলে রাজনীতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই।
শিক্ষার্থীদের নতুন দল নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: নতুন দল নিয়ে আমার বক্তব্য হলো, সামনে যা দেখা যাচ্ছে, সেটা সব না। আমরা অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছি না, সে ব্যাপারটা এদের মধ্যে আছে। এ জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। তবে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজন খুব দরকার। এ দেশে যাঁরা মার্ক্সবাদী রাজনীতি করেন, তাঁরা সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলেন। কিন্তু তাঁরা রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা সেভাবে বলেন না। ফলে তাঁদের বক্তব্য অনেকটা বিমূর্ত থেকে গেছে। রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার বা পরিবর্তন বলতে কী বোঝায়, সেটা জনগণকে বোঝালে জনগণ বুঝত।
জাতীয় নাগরিক পার্টি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির চেয়ে একটা সুশৃঙ্খল পার্টি গঠন করতে চাইছে জনগণের কল্যাণে। কিন্তু সমস্যা অনেক জটিল। রাজনীতি আসলে সহজসাধ্য বিষয় না, অনেকটা কঠিন। যারা কায়েমি স্বার্থবাদী, তাদের রাজনীতি একরকম, সেটা চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। তারা একটা পদ্ধতিতে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং দেশবাসীকেও ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে। আর ক্ষমতায় গিয়ে স্বার্থ রক্ষা করে অল্প কিছু ধনী লোকের। কিন্তু আমাদের দেশেও ভালো কোনো সিস্টেম দাঁড়াল না। এর কারণ হলো, আমাদের জাতীয় রাজনীতির পুরো ইতিহাস থেকে জানা যায় পরনির্ভর রাজনীতি। বিদেশিরা এখানে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি