সাহ্রির ফজিলত ও বিধিবিধান
সাহ্রি রোজা ও রমজানের অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সাহ্রি শব্দের অর্থ শেষরাতের খাবার। ইসলামি পরিভাষায় রোজা বা সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ভোররাতে সুবহে সাদিকের পূর্বে যে আহার গ্রহণ করা হয়, তা হলো সাহ্রি। সাহ্রি একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ সুন্নত। ইসলামি বিধান সহজ, সাবলীল, যৌক্তিক ও মানবিক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কোনো সত্তাকে তার সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
পূর্ববর্তী উম্মতদের রোজায় সাহ্রির বিধান ছিল না। তখন নিয়ম ছিল, সন্ধ্যারাতে এশার ওয়াক্তের মধ্যে ঘুমানোর আগেই পানাহার শেষ করতে হতো। ইসলামের প্রাথমিক যুগেও ওই নিয়ম বিদ্যমান ছিল। সাহাবি হজরত কয়েস ইবনে সারমাহ আনসারি (রা.) সারা দিন পরিশ্রমের পর ইফতার করে আহারের পূর্বেই ঘুমিয়ে পড়েন এবং পরদিন রোজা রেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বিষয়টি প্রিয় নবীজি (সা.)–এর সমীপে পেশ করা হলে সাহ্রির নতুন বিধান–সংবলিত এই আয়াত নাজিল হয়, ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী মিলন হালাল করা হয়েছে।
তারা তোমাদের পরিচ্ছদস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদস্বরূপ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হলেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, তা কামনা করো। আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা হতে উষার শুভ্ররেখা সুস্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সঙ্গে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ তাঁর বিধানাবলি মানবজাতির জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা মুত্তাকি হতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭; তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১০৯-১২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, পৃষ্ঠা: ৯৪-৯৬, সৌদি সংস্করণ)।
তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য সাহ্রির গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহ্রি খাও, কেননা সাহ্রিতে রয়েছে বরকত।’ (বুখারি, ১৮০১)। নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘আমাদের রোজা আর আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহ্রি খাওয়া আর না খাওয়া।’ (মুসলিম, আলফিয়াতুল হাদিস, পৃষ্ঠা: ১৩১)।
‘অর্ধরাত্রির পর থেকে সাহ্রির সময় শুরু হয়।’ (মোল্লা আলী কারি রা., মিরকাত শরহে মিশকাত)। ইমাম জামাখ্শারি (রহ.) ও ফকিহ আবুল লাইস ছামারকান্দী (রহ.)–এর মতে সাহ্রির সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সাহ্রি বিলম্বে খাওয়া সুন্নত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা উচিত নয়, তার পূর্বেই সাহ্রির নিরাপদ সময়সীমার মধ্যে পানাহার শেষ করতে হবে। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহ্রি খাও; যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা সাহ্রি খাও; যদি এক লুকমা খাদ্যও হয়।’ (মুসলিম)। অর্থাৎ যেকোনো প্রকার ও যেকোনো পরিমাণ খাদ্য বা পানীয় দ্বারাই সাহ্রির সুন্নত পালিত হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাহ্রি গ্রহণ না করলে সুন্নত তরক হবে।
যদি কখনো ফরজ গোসল করে সাহ্রি খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকে; তখন অজু করে বা হাত–মুখ ধুয়ে আগে সাহ্রি খেয়ে নিতে হবে। এরপর গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ, সাহ্রি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়; বরং সুন্নত; আর নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা ফরজ। গোসল ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করে নিতে হবে, বিনা ওজরে বেশি সময় অপবিত্র অবস্থায় থাকা সমীচীন নয়; আর রোজা অবস্থায় অনেকক্ষণ অপবিত্র থাকা মোটেও উচিত নয়, এটি মাকরুহ। সাহ্রি খাওয়া সম্ভব না হলেও রমজানের ফরজ রোজা রাখতে হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ফজিলত
- সেহরি
- ইসলামের বিধান