অগণতান্ত্রিক চর্চা থেকে বের হওয়াই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার শাসনের নাটকীয় পতন ছিল একটি বিস্ময়কর ঘটনা। তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তরুণদের মধ্যে জেগেছে আশা। তাঁরা এখন রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি করছেন, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরাচার বাংলাদেশ শাসন করতে না পারেন।
গণ-অভ্যুত্থানের পর এসেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাবের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে আলোচিত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগই নতুন কাঠামো তৈরি এবং নতুন আইন ও বিধি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
তবে রাষ্ট্রকাঠামো ও আইনের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ বাস্তব রাজনৈতিক চর্চার গুরুত্বকে উপেক্ষা করে। শুধু কাঠামো ও আইন পরিবর্তন করলেই নতুন স্বৈরশাসকের প্রত্যাবর্তন রোধ করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, আইন ও বিধির অনুপস্থিতি নয়, বরং রাষ্ট্রের সেগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারা এবং লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়াই অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে।
এখন আমাদের করণীয় হলো সেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চর্চাগুলোকে চিহ্নিত করা, যা দেশের প্রচলিত আইন ও সর্বজনীন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এসব অগণতান্ত্রিক অনুশীলনকে ভেঙে ফেলাই এখন আমাদের সামনের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভাঙন ও গড়ন
গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথ হয়েছে অসম আর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হয়েছে বেশ কিছু ভাঙন। অবশ্য ভাঙনের পর আবার নতুন করে গড়ারও প্রচেষ্টা হয়েছে বারবার।
১৯৭১–এ স্বাধীনতার পর গণতন্ত্রের পথে আমাদের যাত্রার সূচনাটা হয়েছিল ভালো। জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা একটি বহুদলীয় সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ স্বৈরাচারী শাসনের দিকে এগিয়ে মৌলিক স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধসহ একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর সামরিক শাসনের অধীনে পরবর্তী ১৫ বছর অতিবাহিত হয়। ১৯৯০ সালে একটি গণ–আন্দোলন সামরিক শাসনকে উৎখাত করে। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করার সুযোগ পায়। পরবর্তী ১৬ বছর ধরে তিনটি নির্বাচনে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, পালাক্রমে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতার পালাবদল হয় যখন নির্বাচন হয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে।
কিন্তু নিয়মিত নির্বাচন ও ক্ষমতার হাতবদল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মান উন্নত করতে পারেনি। নির্বাচিত সরকারগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব এবং পৃষ্ঠপোষকতামূলক রাজনীতি ব্যবহার শুরু করে। বিরোধী দলগুলো মুখোমুখি হয় দমন–পীড়নের। সংসদ হয়ে পড়ে অকার্যকর। নির্বাচিত সরকারগুলো বেসরকারি খাতের মালিকানাধীন নতুন স্বাধীন মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- চ্যালেঞ্জ
- অগণতান্ত্রিক রাজনীতি