You have reached your daily news limit

Please log in to continue


নাম নিয়ে ছেলেখেলা

কিছুদিন আগে এক বন্ধুর সঙ্গে বাজি ধরে আমি এক হাজার টাকা হেরেছি। এ জন্য প্রথমত দায়ী করতে চাই মহান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে, দ্বিতীয়ত দায়ী আমি নিজে– চলমান ঘটনা থেকে আমার বিচ্ছিন্নতা। আমার বন্ধুটি যখন এক চায়ের আড্ডায় বলল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জগদীশচন্দ্র বসু, জীবনানন্দ দাশ এর মত অন্যদের নামে রাখা সেখানকার অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর নাম পালটে ১, ২, ৩ ইত্যাদি রেখেছে, বিশ্বাস হয়নি। চলতি ঘটনা থেকে চিরবচ্ছিন্ন আমি নির্বোধ অহঙ্কারে ফুলে তখনই বললাম, এটা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নয়, কোনো একটা ক্লাবের ঘটনা। সে তার বক্তব্যে অনড় থাকলে আমি আরও নির্বুদ্ধিতার সঙ্গে এক হাজার টাকা বাজি ধরে বসলাম। দোকান থেকে একটা পত্রিকা এনে সে আমায় ধরিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে গচ্চা দিলাম মাসের শেষ সম্বল এক হাজার টাকার একটি নোট। এই নির্বুদ্ধিতার কথা আমার আরেক বন্ধুকে বলতেই সে বলে উঠল, বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা ঘটেনি, এতে অন্ধবিশ্বাস করলেও, কোনো ক্লাবে যে এমনটা ঘটতে পারে এ উদ্ভট চিন্তাও মাথায় এল কী করে। ঠিক।

আবার দেখুন, অনেক ইতিহাস বিশারদ বলেন পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাদ্রাসার মডেলেই তৈরি। ভাবছি, পশ্চিমে তো যথেষ্ট মাদ্রাসা নেই, তবু তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এত নামডাক, আর আমাদের দেশে এত মাদ্রাসা তবু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন করুণ দশা কেন। মাদ্রাসার পজিটিভ দিকটা হলো যে, তারা তাদের কোনো অ্যাকাডেমিক ভবনের নামই ওই রকম ব্যক্তিদের নামে রাখবে না যাদের নাম আবার হাওয়া বুঝে পালটে দিতে হয়। অবশ্যই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হল ও ভবনের নামই ওই সব জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তির নামে রাখা ঠিক হয়নি। তারা যে সুযোগমত পালটে ফেলেছে এই দূরদৃষ্টির জন্য তারা সারা দেশের প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য!

এ হলো সেই কংসরাজের বংশধর হওয়ার মত বড়াই করে বেড়ানো। বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু না জেনে না বুঝেই অলঙ্কার হিসেবে তাদের নাম ব্যবহার করে নিজেকে জাতে তুলবার এই চতুরতা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মানায় না। ইচ্ছেমত এসব বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করবেন আবার ইচ্ছে হলেই ছুঁড়ে ফেলবেন– এত বুদ্ধিবৃত্তিক দারিদ্র্য নিয়ে এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তাকর্তা হন কী করে? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান সৃষ্টি করা, সেভাবেই তাকে বিশ্বে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করতে হয়, যেসব মনীষী জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন তাদের নাম ভাঙিয়ে নয়।

এই নাম ভাঙানোর চেষ্টা করেছিলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী আবার নিজের নামটাই পাল্টানোর দাবি তুলেছে। অবশ্য তাদের দাবি হচ্ছে পূর্বেরটাই নাকি আসল নাম। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার নাকি ওটাকে বাদ দিয়ে রোকেয়ার নাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুলিয়ে কৃতিত্বটা নিজের থলিতে ভরতে চেয়েছে। নিজে নতুন কিছু করার মুরোদ নেই, যা আছে সেটারই নাম বদলে কৃতিত্ব বাগানোর এই ধান্দাবাজি লজ্জার ও নিন্দনীয়। গত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে এটা অনেক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার ক্ষেত্রেই হয়েছে। সুতরাং রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা আছে।

তবে নাম বদলে ফেলার চেয়ে উত্তম হচ্ছে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির আকাঙ্ক্ষা। কেননা স্বৈরাচারের ইচ্ছায় হলেও রোকেয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় রংপুরবাসীর মান বাড়ে বই কমে না। রোকেয়া কত বড় একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব তা জানলে তার নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আমরা বিব্রত হতাম না, বরং গর্বিত হতাম।

রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ উপন্যাস কেবল একটি নারীবাদী ইউটোপিয়া নয়, একটি সফল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিও। বিজ্ঞান-লেখক থমাস লিউটন ২০১৯-এ ইংরেজি ফেমিনিস্ট ভিশনস অব সায়েন্স অ্যান্ড ইউটোপিয়া ইন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’স সুলতানা’স ড্রিম শীর্ষক প্রবন্ধে একে বলেছেন “এটি বিশ্বে প্রথম দিককার নারীরচিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিগুলোর একটি।” তার মতে রোকেয়া তার সমকালের চেয়ে কয়েক দশক এগিয়ে ছিলেন। এ নারীবাদী বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিটিতে তিনি কেবল বিজ্ঞান ও পুরুষতান্ত্রিকতার যোগসাজশের সমালোচনা করেননি, সমালোচনা করেছেন বিজ্ঞান ও ঔপনিবেশিক আধিপত্যবাদী শক্তির যোগসাজশেরও। নারী-অধিকারের জন্য রোকেয়ার জীবনব্যাপী সংগ্রাম ও লেখালেখি বাংলার রাজনৈতিক অগ্রগতি ও ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে মুক্তির বার্তা বহন করেছে বলেও মনে করেন লিউটন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ঘটনাটি অন্তবর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকেও আহত করেছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে জগদীশ বসুর গল্প শুনেছি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগদীশচন্দ্র বসু, তাঁর মতো বিজ্ঞানীর নামে করা ভবন-স্থাপনা ছিল, সেগুলোর নাম পরিবর্তন করেছে। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের নামে স্থাপনা ছিল। তাঁর পাশাপাশি আরও কয়েকজনের নামে করা স্থাপনার নামও বদলানো হয়েছে। এটি আমাকে মর্মাহত করেছে।”

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন