
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
আপিল বিভাগ কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণার পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজিত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলই চাচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হোক। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজনের চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে এখন সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না।
বিশ্বের কোনো উন্নত ও উদার গণতান্ত্রিক দেশে কখনোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। তারা দলীয় সরকারের অধীনেই গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কহীন নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোনো নির্বাচন নিয়েই তেমন একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয় না। গণতান্ত্রিক দেশের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি কাজ। কারণ এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসই প্রকাশ পায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বাইরের বিশ্বে সংশ্লিষ্ট দেশটি সম্পর্কে ভুল বার্তা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ নিজেকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে দাবি করলেও এখনো এখানে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাস আমাদের রাজনৈতিক কালচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। উন্নয়নকে করছে ব্যাহত। গণতান্ত্রিক বিশ্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও আমাদের দেশের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ ও বিতর্কহীন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প এখন আর নেই।