
দেশের ক্রিকেট নিয়ে হঠকারিতার সুযোগ নেই
বৃষ্টি বাংলাদেশকে এক পয়েন্ট পুরস্কার দিয়েছে। খেলা হলে কী হতো, ক্রিকেটে তো সেটা আগাম বলা যায় না। মাঠের লড়াইয়ে না নেমে ‘মুফতে’ এক পয়েন্ট লাভ। শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয়নি—এটাও এক ধরনের সান্ত্বনা! আরেকজন সাংবাদিক লিখেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বড় চালাক।
তাঁরা একা ডোবেননি, বড় ভাইকে নিয়ে ডুবেছেন। এখন বড় ভাইদের একই চিন্তা কী করব, কী করব! আগের অবদান এবং ভূমিকা তো এখন অতীত। এটা তো আর ‘বিক্রি’ করার সুযোগ নেই! খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পারফরম্যান্স একমাত্র প্রত্যাশা। মাঠে কে কী করেছেন, কিভাবে খেলেছেন সব কিছুই সবাই দেখেছে।
মাছ দিয়ে শাক ঢাকার চেষ্টা এবার পাবলিককে খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠের লড়াইয়ে আমরা অনেকক্ষণ ক্রিজে ছিলাম। ব্যাটিং ব্যর্থতা—‘ডট বল’ রোগ থেকে বের হতে হবে। খেলোয়াড়দের আরো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে খেলতে হবে।
শূন্যস্থানগুলো যত সম্ভব অল্প সময়ের মধ্যে পূরণ করতে হবে। নতুন করে টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ এবং খেলোয়াড়দের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে! পুরনো একই গান বারবার শুনতে মানুষ বিরক্ত। তারা ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট এবং খেলোয়াড়দের কাছ থেকে নতুন কিছু প্রত্যাশা করে। আর এই প্রত্যাশা হলো আত্মবিশ্বাসী, সাহসী এবং দায়িত্বশীল ক্রিকেট।
মানুষের প্রত্যাশা হলো মাঠে এবং মাঠের বাইরে ক্রিকেটে পরিবর্তন। ক্রিকেটে প্রয়োজন বাস্তবধর্মী সংস্কার সাধন। প্রতারণা, ফাঁকিবাজি আর আত্মতৃপ্তি থেকে ক্রিকেট বোর্ড এবং ম্যানেজমেন্ট বেরিয়ে আসুক। বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় পেশাদারি মনোভাব গুরুত্ব পাক। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। কোয়ালিটি ক্রিকেটার নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পিত কাজ করা হোক। সময় যত গড়াচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ততই ‘কম্পিটিটিভ’ হচ্ছে। টিকে থাকতে হলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই হবে। বারবার দেশকে হেয় করার সুযোগ কেন দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ আইসিসি ক্রিকেটে পিছিয়ে পড়ছে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলেছিল আর এবার ভাগ্যের কৃপায় এক পয়েন্ট। পিছিয়ে যাওয়া তো শুরু হয়েছে সেই ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পাঁচালি তো কারো অজানা নয়। অথচ ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল চমৎকার ক্রিকেট উপহার দিয়েছে। সবাই এগিয়ে চলেছে। আফগানিস্তানের দিকে তাকালে অবাক হতে হয়। ওরা ক্রিকেটের অন্যতম একটি শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চলেছে। আমরা সেখানে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি।
আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়, অধিনায়ক, টিম পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা সব সময় বিজ্ঞ অধ্যাপকদের মতো কথা বলেই চলেছেন। কাজের কাজগুলো সম্মিলিতভাবে সময়মতো যা করার কথা, সেটি করেন না। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কথা বলা তো নিজের সঙ্গে প্রতারণা করা। এখন বলা হচ্ছে বিপিএল যদি আরো আগে শুরু করে শেষ করা যেত—তাহলে হাতে সময় থাকত, তখন প্রস্তুতি নিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেওয়া সম্ভব হতো। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তো অনেক আগের থেকেই নির্ধারিত করা আছে। তাহলে আগে কেন এই চিন্তাগুলো মাথায় আনা হয়নি। সবাই দ্বিপক্ষীয় এবং ত্রিদেশীয় ক্রিকেট খেলেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কেন আগে থেকে এই প্রয়োজনীয় বিষয়টি নিয়ে ভাবেনি। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ডের দায়িত্ব নিয়েছেন নতুন সভাপতি, ক্রিকেট অপারেশনের দায়িত্বে যিনি, তিনিও বোর্ডে নতুন। আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তো ক্রিকেটকেই সার্ভ করতে বোর্ডে এসেছেন। তাঁদের তো এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। আসলে ক্রিকেট বোর্ডে সমন্বয়নের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ কখনো করা হয় না। যখন গায়ের ওপর এসে পড়ে, তখন শুরু হয়ে যায় হৈচৈ! যেটি অর্থহীন—লোক-দেখানোর জন্য।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ক্রিকেট অঙ্গন