
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় ঐক্য
৫ আগস্ট, ২০২৪ অথবা ৩৬ জুলাই আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা এসেছে, যেখানে তরুণদের ভূমিকা, ত্যাগ ও সাহস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ৩৬ জুলাই নামক বিশেষ দিনটি নতুন তারিখ চিহ্নিত করাসহ গবেষকদের নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। আমাদের ইতিহাস রক্ষণার্থে এ প্রয়াস একদিন অনেক বাস্তবতার সাক্ষ্য দেবে। আমি যখন একজন নাগরিক হিসাবে রাস্তা দিয়ে, বিশেষ করে কোনো বিদ্যাপীঠের পাশ দিয়ে হাঁটি এবং নজর দিই, তখন আমি বিস্মিত হই তরুণদের ‘নতুন বাংলাদেশ’ নিয়ে ভাবনা দেখে। আমরা যারা তাদের থেকে বয়সে অনেক বড়, তারা কিন্তু অনেকেই কখনো ভাবিনি ৫ আগস্ট, ২০২৪ বা ৩৬ জুলাই এ দেশে এমন কিছু ঘটে যাবে বা যাচ্ছে। আমার কন্যাসন্তানটিও আমাদের ভুল ধরিয়েছে। যেহেতু আমি চাকরিরত এবং সেনানিবাসে সুশৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত, আমার সন্তানের নৈতিক অবস্থান আমাকে কখনো ভাবিয়েছে, কখনো গর্বিত করেছে। পরিস্থিতি এমনভাবে অগ্রসর হলো, কীভাবে যেন আমি ৩ আগস্টের সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানের সবার উদ্দেশে আলোচনার চিঠি আমার ছোট মেয়ের ফেসবুক বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে পেলাম; যা হোক, অপরাধ বা সঠিক যাই বলি না কেন, জনগণের কাছে ক্ষণিকের মধ্যেই সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, মহানুভব ফসল-‘ছাত্রদের বুকে গুলি নয়’ খবরটি বিশ্বের সব স্থানে পৌঁছে গেল। বাংলাদেশ প্রবেশ করল নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার পথে। আমাদের মতো পেশাদারদের শুরু হলো নতুনভাবে লেখাপড়া, গবেষণা ও লেখার উদ্যোগ।
শুরুতেই আমার কৃতজ্ঞতা জুলাই বিপ্লবের সব শহিদ ও আহত তরুণ যোদ্ধাদের। তারপর সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতি, যিনি একটি রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি থেকে দেশমাতাকে রক্ষা করেছেন। সেইসঙ্গে আমি কৃতজ্ঞ জনাব পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসেন, কনক সারোয়ার, লে. কর্নেল মুস্তাফিজসহ অন্য সব বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক, যারা বিভিন্ন তথ্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে জাতিকে আলোকিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। তবে তাদের জানার ও বিশ্লেষণে ভুল থাকতে পারে, যা আমাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। অনেকের মতে, অনেক কিছু মিথ্যা, মনগড়া ও অতিরঞ্জন হতে পারে, কিন্তু আমাদের মানতেই হবে তারা দেশকে ভালোবাসেন এবং তারা দেশের ভেতরে থেকে জীবন-জীবিকার জন্য ঝুঁকি না নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। বাদ পড়ে গিয়েছিল জনাব জুলকারনাইন সায়েরের কথা উল্লেখ করতে। সম্প্রতি ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও অন্যান্য মাধ্যমের কারণে নতুন প্রজন্মের কথা বলা ও চলার ভাষার পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম লেখায় এ বিষয়ে মন্তব্য করছি না। কারণ আমার বিশ্লেষণের বিষয় ভিন্ন এবং ভাষা ও বইকেন্দ্রিক। এ লেখায় তা না লিখলে আমার মনে হবে ‘আমি তো বলে যেতে পারিনি’। তাছাড়া কে জানে কখন কোন বাংলাদেশি, কোন নাগরিক এমন কিছু মন্তব্য করলেন, যা থেকে লেখার অনুপ্রেরণা দেওয়া তো দূরে থাক, অভিমানে লেখা বন্ধ করে দিতে হলো। বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি ভয়ানক। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলতে চাই, কিছুদিন আগে আমার বেশ ক’জন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলো, যারা অনেক আগেই অবসরে গিয়েছেন। চাকরিরত অবস্থায় তাদের কর্মস্থল ছিল আলোকিত, তাদের জ্ঞান বিতরণের ইচ্ছা ও মান ছিল প্রশংসনীয় ও ঈর্ষণীয়। কিন্তু তাদের আমরা (অধীনস্থরা) আমাদের কাঙ্ক্ষিত ও স্বপ্নের স্থানে দেখতে পাইনি। সেজন্য তাদের মনে হয় অভিমান আছে। এ বিষয়টি আমাদের যত সম্ভব ত্বরিত অনুধাবন করা যাবে, তত জাতির মঙ্গল হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা জাতীয় ঐক্যের বড় অন্তরায় ছিল। বাঙালির ঐক্য বিনষ্ট হলে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হবে, তা আমাদের জানা দরকার।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ছাত্র আন্দোলন
- জাতীয় ঐক্য
- গণঅভ্যুত্থান