
জবরদস্তি ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরকার কোথায়
দেশে ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, জখম, হামলা, ভাঙচুর, লিঙ্গীয় আক্রমণ ইত্যাদি বেড়ে যাওয়ার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। তিনি বিশেষভাবে সন্তুষ্ট তথাকথিত ‘ডেভিল হান্ট’ নাম দিয়ে পাইকারি গ্রেপ্তারে। অথচ খোদ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসছে, মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।
এর মধ্যেই মহাসড়কে বাসে ডাকাতির পাশাপাশি নারী যাত্রী ‘ধর্ষণের’ খবর প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে তিন দিন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। এরপর মামলার পর কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তা কোনো তদন্ত ছাড়াই ঘোষণা দেন, ‘ধর্ষণ নয়, শ্লীলতাহানি হয়েছে’। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হওয়ার পর পুলিশের নড়াচড়া বেড়েছে। প্রতিবাদ–প্রতিরোধ না থাকলে আইন, আদালত, পুলিশ, যৌথ বাহিনী, কোনোটাই কাজ করে না—এ চিত্র হাসিনা আমলের। কোনোই পরিবর্তন হয়নি।
গত কয়েক মাসে মাজার, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মসজিদ ও মন্দিরে হামলা দেশে ধর্মের নামে অসহিষ্ণুতা, বিদ্বেষী ও বৈষম্যবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতার স্বাক্ষর তৈরি করেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক মাজার ও দরগাহ শরিফে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো শাহ ভালার দরবার শরিফ হামলা-ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। ঢাকার ধামরাই উপজেলায় তিনটি মাজারে হামলা হয়। হামলাকারীরা দুটি মাজার পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছে। অপরটির আংশিক ভাঙা হয়েছে। সিলেট সদর উপজেলার শাহ সুফি আবদুল কাইউম চিশতির মাজার, ঢাকার নবাবগঞ্জের দরবারে এলাহি জামে মসজিদ ও শেরপুরের খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে হামলা–ভাঙচুরের পর থেকে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কয়েকটি ক্ষেত্রে মামলার কথা শোনা গেলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতার খবর পাওয়া যায় না। বিভিন্ন স্থানে বাধার কারণে বার্ষিক ওরসের আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে। বগুড়ার ধুনটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে যাত্রাপালার অনুষ্ঠান ও মেলা বন্ধ করা হয়েছে। নারীদের ফুটবল ম্যাচ বাধাগ্রস্ত হয়েছে জানামতে তিনটি অঞ্চলে।
পুলিশের বরাত দিয়ে মাসখানেক আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ‘দেশে গত ৪ আগস্ট থেকে পরবর্তী সাড়ে ৫ মাসে ৪০টি মাজার, সুফি সমাধিস্থল ও দরগাহে ৪৪টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।...৪৪টি হামলার ঘটনাতেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৩ জনকে।’ তবে বিশ্ব সুফি সংস্থা নামের একটি সংগঠন অভিযোগ করে, ‘দেশে গত ৬ মাসে ৮০টি মাজার ও দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’ ভারতে অতিরঞ্জিত খবর প্রচারিত হলেও মন্দিরে হামলারও অনেক অভিযোগ আছে। সরকারকে সেগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে।
এ ছাড়া উৎসব, মেলা, গানের আয়োজনও হামলার মুখে পড়ছে। কয়েকটির কথা বলি। গত নভেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় দুই দিনব্যাপী সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন হুমকির মুখে পণ্ড হয়ে যায়।
১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাধাগ্রস্ত হয়েছে লালন স্মরণোৎসব। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বসন্ত উৎসবের আয়োজন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের সিআরবি মাঠে আবৃত্তি সংগঠন প্রমার বসন্ত উৎসব সারা দিনের অনুমতি থাকলেও দুপুরে অনুমতি বাতিল হয়। কয়েকটি স্থানে উৎসবে ‘বসন্ত’ শব্দটি বাদ দিতে হয়েছে। বাধার কারণে ১৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ‘ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব’ বন্ধ করা হয়েছে। ৮৫টি নাট্যদল এর সঙ্গে যুক্ত ছিল।