
অটুট থাকুক ঐক্যের ঐকতান
বিশ্ববাসীর অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখা ৫ আগস্টের জাতীয় ঐক্য রচনার কারিগরদের কারো কারো খোঁচাখুঁচি কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। ক্ষেত্রবিশেষে শঙ্কাও জাগায়। যেকোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই হয় বিপ্লবীদের মধ্যে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। বিভিন্ন মত ও পথের মানুষের সময়ের প্রয়োজনে বিপ্লবে শামিল হওয়ায় এমনটা হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়েছে। বিপ্লবের পর বিভাজন রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনা, এই বিভাজন এড়িয়ে যেতে পারাটাই কাঙ্ক্ষিত। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিতাড়িত ফ্যাসিস্টদের ফিরে আসার পথঘাট তৈরি হয়। বিনষ্ট হয় জাতীয় ঐক্য। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিপ্লব ঘটানো শক্তি।
চব্বিশের জাতীয় ঐক্য গঠনে কারো ঘোষণা বা আহ্বান জানাতে হয়নি। রেজিম বদলে যার যার জায়গা থেকে সবাই অঘোষিতভাবে এক দফায় একমুখী হয়ে যায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ঐক্যের ঐকতান বেজে ওঠে। সবাই যেন এ অপেক্ষাই করছিল। কিন্তু মাত্রমাস কয়েকে সেই মনোজগতে পরিবর্তন। জনমনেও নানা সংশয়-শঙ্কা। ৫ আগস্টের আগে আন্দোলনকারী ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক দলের অভিন্ন প্রতিপক্ষ ছিল স্বৈরাচারী সরকার। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই সরকার বিদায় নেওয়ার পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল, আন্দোলনকারী সব পক্ষের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করবে। অন্তত তারা জনগণের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানে ব্রতী হবে। কিন্তু বাস্তবতায় গোলমাল ঘটছে।
সরকারের দিক থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে- সংস্কার, ফ্যাসিস্টের বিচার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলবে। এ গুলোর কোনোটি কোনোটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। প্রধান উপদেষ্টার ভাষায়- রাজনৈতিক দলগুলো যতটুকু সংস্কার চাইবে ততটুকু সংস্কারের পর নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোই করবে মূল সংস্কার। ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি বলেছেন, তার সরকার সেকেন্ড ইনিংস শুরু করেছে। নতুন বাংলাদেশ মানে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।’
এমন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলার আর কিছু বাকি রাখেননি । প্রায় সবই পরিষ্কার। এরপরও নানা গীত-বাজনা। কে না বোঝে, সংস্কার মূলত চলমান প্রক্রিয়া। শুধু রাজনীতি নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার অপরিহার্য। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ১০টি সেক্টরে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট জমাও দিয়েছে। সংস্কার ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন এরইমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একটি ফলপ্রসূ বৈঠকের পরও নানা ভেজাল পাকানো হচ্ছে।
শঙ্কা ছিল ভারতের দিক থেকে। তা ক্রমশ কেটে যাচ্ছে। পিঠ দেখানো নয়, দিল্লির চোখে চোখ রেখে কথা বলছে ঢাকা। কখনো ঘৃণায়, কখনো কৌশলী কূটনীতিতে ভারতকে অবিরাম চপেটাঘাত করেই চলছে বাংলাদেশ। ভারতের খাস পছন্দের এবং নিয়োগকৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের লজ্জাজনক পরিণতি সইতে পারছে না ভারত। তারওপর একের পর এক বাংলাদেশের ডেমকেয়ার ভাব সহ্য করা বিষ খেয়ে বিষ হজমের মতো দেশটির জন্য। কিন্তু, পাল্টা ব্যবস্থা বা প্রতিশোধের কোনো উপায় পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দিল্লিতে বসে হাসিনা নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের তীর ছুড়েছে বাংলাদেশের দিকে। প্রতিটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। পাচার করা টাকা খরচ করে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের চেষ্টা করছে। সজীব ওয়াজেদ জয় কোটি কোটি টাকা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। সেটিও কার্যত ব্যর্থ হয়ে গেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে। হাসিনার রাজনীতিতে জাতিসংঘ কার্যত শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জাতীয় ঐক্য