বিন্নার বেষ্টনী দিন, চরগুলো নিজে থেকেই বদলে যাবে

প্রথম আলো নাহিদ হাসান প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:১৯

বাংলাদেশে সচরাচর যেসব বিন্না ঘাস চোখে পড়ে, সেগুলোর শিকড় ছড়িয়ে যায়, সোজা গভীরে যায় না। অনেকটা বাঁশের আড়ার (ঝাড়) মতো। ঢেউ যখন নদীর পাড়ের তলদেশ থেকে মাটি সরায়, তখন বিন্নার শিকড় তা ঠেকাতে পারে না। কল্পনা করুন, যদি বাঁশের শিকড় সোজা গভীরে যেত, তাহলে নদী তো ছাড়, পাহাড়ি ঢলেও কিছু হতো না। ফলে এগুলো নদীভাঙন ঠেকাতে অক্ষম।


অথচ শিলিগুড়িতে তিস্তার ভাঙন ও থাইল্যান্ডে পাহাড়ধস ঠেকিয়ে রাখে একধরনের বিন্না ঘাস। শিলিগুড়ি বা থাইল্যান্ডের এই বিন্না ঘাস সোজা মাটির ২০ ফুট পর্যন্ত গভীরে চলে যায়। বছরখানেকের মধ্যেই থোপ বা ঝাড় তৈরি হয়। অর্থাৎ ইরি ধান লাগানোর মতো করে চরের চারদিকে চারা রোপণ করা গেলে এক বছরেই ঘন বেষ্টনী তৈরি হবে।


পাহাড়ের পার্শ্বঢাল রক্ষায় বিন্না ঘাসের জুড়ি নেই। তাই প্রকৃতিতে অনেকটা অনাদরে জন্ম নিলেও এই ঘাসের খ্যাতি ও কদর বিশ্বজোড়া। বিভিন্ন দেশে পাহাড়ের ক্ষয়রোধ ও পাহাড়ধস বন্ধে পার্শ্বঢালে এই জাদুকরি ঘাস লাগানো হয়। কারণ, বিন্না ঘাসের মূল গভীরে চলে গিয়ে মাটিকে শক্ত করে আঁকড়ে রাখে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, বিন্নার তিনটি শিকড় এক সুতা লোহার সমান শক্ত। উল্টো লোহা ক্ষয় হয়, এটা দিনকে দিন মজবুত হয়।


চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস ও লালখান বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত বাটালী হিলের মিঠাপাহাড়ের পাদদেশে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এই ঘাস লাগানোও সফল বলে প্রমাণিত হয়। এই পাহাড়ি বিন্না ঘাস পাহাড়ের ধস ঠেকাতে পারলে নদীভাঙন তো সহজ। ২০০০ সালে নেত্রকোনা জেলার কংস নদের পাড়ে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের মাটি রক্ষায় এই ঘাস সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে।



বিন্না ঘাস পৃথিবীর অনেক দূষিত নদীকে শোধনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। হাজার বছর ধরে এ দেশের মানুষেরা পুকুরপাড়ে বিন্না ঘাস লাগিয়ে রাখতেন একটি কোনায়, পানিকে মিষ্টি করার জন্য। এই ঘাসের শিকড়ে দারুণ সুগন্ধযুক্ত তেল হয়। সেই তেলে বেনজয়িক অ্যাসিডের প্রাবল্যের কারণে এর সুঘ্রাণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। এমন গুণের তেলের এমনিতেই পারফিউমশিল্পে কদর বেশি। যার কারণে অন্য ফুলের সুঘ্রাণের স্থিতি রক্ষার্থে বিন্না ঘাসের শিকড়ের তেল নানা প্রসাধনীতে বেশি ব্যবহৃত হয়। বেনজয়িক অ্যাসিড চামড়ার নানা দাগ দূর করে। একজিমা, ফোসকায় কাজে দেয়, ফলে এর তেল চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়।


আগে ব্রহ্মপুত্রের কাশিয়ার খেতগুলো (কাশবন) ছিল এজমালি গোচারণভূমি। কাইম বা স্থায়ী ভূখণ্ডের অবস্থাপন্ন গৃহস্থরাও চরের বাসিন্দাদের গরু-মহিষ আধি দিতেন। দেখা যেত, চরের প্রতিটি ঘরে যাঁর কিছু নেই, তাঁরও চার–পাঁচটি গরু ছিল। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ‘চিলেকোঠার সেপাই’–এ এসব চরের গরুর বাথান, খোঁয়াড়ের কথা বলেছেন। দেবেশ রায়ের ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’–এর বাঘারু তো একজন রাখাল। উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান গ্রামে গ্রামে ঢেউ তুলেছিল, তার গোড়ায় তো এই গরু, গোয়াল, গোলাই।


ট্রাক্টর আসায় সেই কাশিয়াখেত এখন আবাদি জমি। ভূমিহীনের নামে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দখলে। বাজার থেকে কেনা কোম্পানির গোখাদ্য দিয়ে কি পোষায়? ট্রাক্টর, সবুজবিপ্লব, খাসজমি দখল চক্রে মিলে ‘চিলেকোঠার সেপাই’–এর ব্রহ্মপুত্র-যমুনার চরের চেংটুরা এখন ঢাকার হাড্ডিখিজিরদের দলে যোগ দিয়ে রিকশা চালায়। শরৎচন্দ্রের গফুর মহেশকে বিক্রি করে দিয়ে পোশাকশ্রমিক হয়।


বিন্না ঘাসের বেষ্টনী হবে গরু-মহিষের এজমালি গোচারণভূমি, প্রকৃত ভূমিহীনেরা গরু-মহিষ পালন করতে পারবেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও