বিদ্যমান ব্যবস্থায় মৌলিক অধিকার পূরণ হবে না

যুগান্তর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৫

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনকে আমি বিপ্লব বলব না। আবার কেউ কেউ এটিকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলছে, এটিও ঠিক না। এটি একটি চরম ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন। যেটি প্রত্যাশিত ছিল। মানুষ খুব চাইছিল। পতন না হলেও পরিবর্তন একটা ঘটতে পারত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, অর্থাৎ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারত। কেননা তারা তো বুঝতেই পারছিল যে, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই।


জনগণের যে রায়-সেই রায়টি যদি তারা মেনে নিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, তাহলে তারাও বেঁচে যেত; আবার এই যে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেল, প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ, ২৫ হাজার আহত হলো, এগুলো কিছুই ঘটত না। গোটা ব্যবস্থায় একটা ভয়ংকর অবস্থা দেখা দিল। অর্থনৈতিক জীবন ভীষণভাবে বিপন্ন হলো, যে মানুষ বেকার হলো এবং আন্দোলনের সময়ে এই যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, যেমন-ছোট ছোট দোকান, যারা ফুটপাতে বসত, নানারকম হকারের কাজ করত-এই যে চা-ওয়ালা, ঝাল মুড়িওয়ালা-এরকম অসংখ্য ছোট পুঁজির মানুষের ভয়াবহ বিপদ গেছে। সব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিদিনের শ্রমিকদের অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে।


স্বাভাবিকভাবে যদি ক্ষমতা হস্তান্তর হতো, তাহলে এগুলো ঘটত না। তারা ক্ষমতার টিকে থাকতে চাইল শক্তিপ্রয়োগ করে। অত্যন্ত নির্মমভাবে শক্তিপ্রয়োগ করেছে, যেটি আমাদের ইতিহাসের মধ্যে নেই। এটিকে আমরা গণহত্যা বলতে পারতাম, যদি একটি গোষ্ঠী কিংবা একটি সম্প্রদায়কে নির্মূল করার জন্য করা হতো। সেটি হয়নি, তবে এটি নির্বিচারে হত্যা। যারা আন্দোলনটা করছিল, তাদের দমনের জন্য অতি নৃশংস একটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার ব্যাপক নির্বিচারে হত্যা করেছে। টেকনিক্যালি এটিকে হয়তো গণহত্যা বলতে পারব না, কিন্তু নির্বিচারে ভয়াবহ হত্যা হয়েছে, এটি একার্থে গণহত্যাই।



পুলিশ নামাল, তারা ইচ্ছামতো অত্যাচার করল, এরপর বর্ডার গার্ড নামাল, তারপরে আর্মি এলো এবং শেষ পর্যন্ত যেহেতু আর্মি আর এগোতে সাহস করল না, তাদের সমর্থন করল না-এটি নিশ্চিত হওয়ার পরে তারা পালিয়ে গেল। জনগণের ভয়ে তারা পালিয়ে গেল। এই যে পতনটা, এভাবে ঘটল-খুবই রক্তাক্ত, খুবই ক্ষতিকর এবং খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা। সেদিক থেকে মানুষের যে যন্ত্রণা, যে দুর্ভোগ-সেটি কমল না। ওই সরকার যে কেবল শেষের দিকে এসে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে-তা নয়, তারা ১৫-১৬ বছর ধরে আমাদের নিঃস্ব করে দিচ্ছিল। আমাদের সম্পদ পাচার করছিল। যেটি দেশের জন্য অত্যন্ত মারাত্মক ঘটনা। ভয়াবহ বিপদের কথা হচ্ছে, এরা বৈধভাবে নিয়মের মধ্য দিয়ে ব্যাংকের সব টাকা-পয়সা বের করে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছিল। আবার অবৈধভাবে ও ইচ্ছামতো টাকা বিদেশে পাচার করছিল। অর্থনীতিকে মারাত্মক রকম দুর্বল করে দিয়েছে গত সরকার।


তবে হ্যাঁ, তারা যে উন্নয়নের কথা বলছিল, উন্নয়নের যে ছবি দেখাচ্ছিল, উন্নয়নের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল দিন-রাত, প্রকৃতার্থে এই পুরো ব্যাপারটাই-মানে উন্নয়ন ছিল অন্তঃসারশূন্য। এই উন্নয়ন কোনো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করেনি। ঋণ বাড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না হলে অর্থনীতি কখনো শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সমাজে অরাজকতা দেখা দেয়। এমনকি শিক্ষাক্ষেত্রেও অনীহা দেখা দেয়। আমরা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বলি, মান নেমে গেছে অত্যন্ত নিচে। এর একটি কারণ হচ্ছে অনীহা। কর্মসংস্থান নেই, এই যে ছাত্ররা পড়ছে-বাবা-মা কষ্ট করে তাদের পড়াচ্ছে, টাকা দিচ্ছে, তাদের একটা স্বপ্ন আছে; সে যখন সেখান থেকে পড়াশোনা করে, পাশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে, কোথায় যাবে? তার কাজটা কী হবে? সে তার পরিবারের জন্য কী করতে পারবে? এই যে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, কর্মের অভাব তৈরি হয়েছে-সেটি কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আমাদের ছাত্র সংসদগুলো খুব কার্যকর প্রতিষ্ঠান ছিল। সাংস্কৃতিক দিক থেকে, নেতৃত্ব তৈরির দিক থেকে তরুণদের উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করত; ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করত।


আমরা ’৯০ দশকের শুরুতেও স্বৈরাচারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলাম, তারপরে ১৯৯১-পরবর্তী যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমরা আশা করেছিলাম, তার পরিবর্তে অনির্বাচিত সরকার, সেনাসমর্থিত সরকার এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের নির্বাচন হয়, কর্মচারীদের নির্বাচন হয়, কিন্তু ছাত্রদের নির্বাচন হয় না। এই যে বিষয়টি-এটি অনেক ক্ষতি করেছে। এর দায় প্রতিটি সরকারকেই নিতে হবে। এককভাবে কোনো সরকারকে দেওয়া যাবে না। বুর্জোয়া শাসকরা কেউই তরুণদের তারুণ্যকে রক্ষা করতে দেয়নি। তারুণ্যের গুণ হচ্ছে সংবেদনশীলতা, বিদ্রোহ, অন্যায়ের প্রতিবাদ, রুখে দাঁড়ানো, ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তারুণ্যের যে গুণগুলো রয়েছে, তার কোনোটাই বুর্জোয়া সরকারগুলো পছন্দ করে না। কারণ হচ্ছে, এ সরকারগুলো সবই পুঁজিবাদী সরকার এবং পৃথিবীব্যাপী পুঁজিবাদ নিজেই একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সংকটের মধ্যে থেকে ফ্যাসিবাদ জন্ম নিচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও