
পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলই কি সমাধান?
এই লেখাটি যিনি পড়ছেন, তার যদি পাসপোর্ট থাকে এবং পাসপোর্ট করতে গিয়ে ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশকে টাকা (ঘুষ) না দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি সৌভাগ্যবান। কেননা এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন, যার পাসপোর্ট করার সময় পুলিশকে ঘুষ দিতে হয়নি—তা তিনি যে পেশারই হোন না কেন।
পাসপোর্ট করার জন্য বছরের পর বছর নাগরিকদের নানাবিধ তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। যে কারণে অনেক বছর ধরেই এই আলোচনা ছিল, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরেও কেন পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে?
এমন বাস্তবতায় সম্প্রতি পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিছু শঙ্কা রয়ে গেছে বলে অনেকে মনে করেন।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন-টিআইবি পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিল আরও ৮ বছর আগে—২০১৭ সালে। ওই বছরের ২১ আগস্ট 'পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতির কারণে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি ও দুর্নীতি হয়। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা ওই ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, নতুন পাসপোর্টের আবেদনকারীদের তিন চতুর্থাংশকেই পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে 'ঘুষ বা নিয়ম বহির্ভূত টাকা' দিতে হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে হয়রানি হচ্ছে। ফলে এটার কোনো দরকারই নেই। এর বদলে সকল নাগরিকের জন্য 'বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক' এবং 'অপরাধী তথ্য ভাণ্ডার' তৈরি করে তার সঙ্গে পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সংযোগ স্থাপন করার সুপারিশ করেন তিনি।
এরপর বিভিন্ন সময়ে পাসপোর্ট করতে গিয়ে পুলিশি প্রতিবেদনের নামে নাগরিকদের নানাবিধ হয়রানির খবর গণমাধ্যমে এসেছে। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষে থেকেও পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের সুপারিশ করা হয়। গত গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, তিনি মনে করেন, পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন নেই।
অবশ্য গত ৬ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অধিদপ্তর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নেওয়া ঠেকাতে পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি এখনই তুলে দেওয়া যাচ্ছে না।
যদিও পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরে গত সোমবার তিনিই আবার বলেছেন, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ায় রোহিঙ্গারা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, জনগণকে ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া হয়েছে। অনেক দিনের চিন্তাভাবনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পাসপোর্ট
- পুলিশ ভেরিফিকেশন