![](https://media.priyo.com/img/500x/https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/14/82ef9e53-2d2c-4dd2-9803-e6aabad2e1bd.jpg)
সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোয়েন্দা সংস্থার অপব্যবহার করেছেন, বন্ধে আইনি কাঠামো প্রয়োজন
গত বুধবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি, রাজনৈতিক বিরোধীদের আটক, জিজ্ঞাসাবাদ, মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়া, ভয় দেখানো ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গড়ে তোলা গোপন নির্যাতন কেন্দ্র 'আয়নাঘর' পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তৎকালীন সরকার যাদের নিশ্চিহ্ন বা দমন করতে চেয়েছে, তাদের নেওয়া হতো এসব 'আয়নাঘরে'।
একই দিন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় বহুল প্রতীক্ষিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে শেখ হাসিনা সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থান কীভাবে মোকাবিলা করেছে এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে সেই বিষয়ে তদন্তের ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, 'প্রধানমন্ত্রী নিজেই আন্দোলন দমন করতে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে এবং স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, "আন্দোলনের মূলহোতাদের গ্রেপ্তার করো, ঝামেলা সৃষ্টিকারীদের হত্যা করো এবং তাদের মরদেহ লুকিয়ে ফেলো।' ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
একইদিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য মিলিয়ে দেখা যাক। ওই দিন ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে 'দেখামাত্র গুলি' করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগের দিন—১৮ জুলাই ২০২৪—স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক 'কোর কমিটি'র বৈঠকে বিজিবি প্রধানকে নির্দেশ দেন, 'প্রয়োজনে আরও বেশি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।' এসব তথ্য একসঙ্গে বিবেচনা করলে বোঝা যায়, শেখ হাসিনা প্রশাসনের মানসিকতা কতটা নির্মম ছিল, তারা কতটা হিংস্র মানসিকতা নিয়ে এই আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার 'আয়নাঘর' পরিদর্শনের পরেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নৃশংসতার প্রকৃত চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ ২০২২ সালে প্রথম এই গোপন নির্যাতন কেন্দ্রগুলোর খবর প্রকাশ করে। আমরা এক সপ্তাহ পর সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করি। দেশে আমরা যারা সাংবাদিকতা করছি, তারা সেইসময়ে প্রতিনিয়ত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ছিলাম। আমরা যে কাজ করার কথা ভাবতেও পারছি না, সেটাই করে দেখিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকরা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
আমরা এই ঘটনা নিয়ে যতই উদ্বেগ প্রকাশ করি, লিখি বা নিন্দা জানাই না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এমন ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে সেটা নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে, যা অতীতে রাজনৈতিক কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। আশা করি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় এবার এসব পরিবর্তন নিশ্চিত করা হবে, যাতে এমন কিছু আর না হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো, ১৮৬১ সালের ঔপনিবেশিক পুলিশ আইনের সংস্কার। এটি সত্যিই বিস্ময়কর যে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও আমরা এই পুরোনো আইন নিয়েই চলছি। বহু বছর ধরে আমরা পুলিশের সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি—তাদেরকে জনগণের সেবক হিসেবে গড়ে তুলতে বলছি, দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে নয়। আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে আধুনিক পদ্ধতি শিখতে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।