![](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2025February/moni-haider-valentine-20250214101203.jpg)
জলে ও জ্বলে ভালোবাসার গান
‘কারে বলে ভালোবাসা, কারে বলে প্রেম
মিলনে বিরহে আমি জানলেম...’
এ জে মিন্টু পরিচালিত ‘মান সম্মান’ সিনেমার গান। শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে গাওয়া গানটির লিপে ছিলেন নায়ক আলমগীর। সাদা কালো যুগের ছবি। গানটা সেই সময়ে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। সময়ের চালচিত্রে গানটি এখনো পাঠকদের মনে সুখ ও জ্বালা বাড়ায়।
প্রেম কী কেবলই একটা শব্দ? নাকি মানব সংসারের যন্ত্রণার বাঁশি, কেবলই বেজে যায় অথৈ আগুনের জ্বলে? প্রেম আর ভালোবাসা শব্দ দুটোর মধ্যে কতটুকু পার্থক্য? বাংলা ভাষায় একটি শব্দের বিপরীতে অনেক শব্দ। ফলে অনেক সময়ে খুঁজে তল পাওয়া মুশকিল শব্দের গতি প্রকৃতি ও অর্থ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বময় প্রেমের সন্ধান করেছেন আকুল হৃদয়ে। জীবনের চারপাশে তিনি রোপণ করেছেন প্রেম বৃক্ষ। গানে, কবিতায়, নাটকে, গল্পে, উপন্যাসে—কোথায় তিনি ভালোবাসার সেতার বাজাননি আপন আনন্দযজ্ঞের বলয়ে? বিচিত্র রূপ ও রূপান্তরে তিনি ছিলেন প্রেমের পূজারি।
তিনি বলেছেন—প্রেমের দ্বারা চেতনা যে পূর্ণশক্তি লাভ করে সেই পূর্ণতার দ্বারাই সে সীমার মধ্যে অসীমকে, রূপের মধ্যে অপরূপকে দেখতে পায়, তাকে নতুন কোথাও যেতে হয় না।
আবার রবীন্দ্রনাথ গানে লিখেছেন—আমি রূপে তোমায় ভোলাবো না, ভালোবাসায় ভোলাবো...।
কীভাবে পরিস্থিতি ও বোধের কারণে প্রেম ও ভালোবাসা মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টে যায়, তা বাণী ও সুরে আঁকেন তিনি।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের অমর ও অদ্বিতীয় পুরুষ। প্রেম ও ভালোবাসার এক দুরন্ত পথিক তিনি। গানে কবিতায় গল্পে উপন্যাসে কাজী নজরুল ইসলাম ভালোবাসার তরী ভাসিয়েছেন জলে, ডাঙ্গায় এবং অন্তরীক্ষে।
প্রেমের মূল সম্পদ বিরহ। বিরহের মধ্যে প্রেম কেঁপে ওঠে রহি রহি...। বিরহের মূল তন্ত্র ধারণ করে কবি কাজী নজরুল নিজেকে ছড়িয়েছে প্রেমের সংসারে, ভালোবাসার সমুদ্রে। তিনি গানের খাতায় লিখেছেন—তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সেকি মোর অপরাধ...। বিরহের যাতনায় তিনি ছিলেন আকণ্ঠ নিমজ্জিত। লিখেছেন গান—আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়, মোছ আঁখি দুয়ার খোলো দাও বিদায়...।
ভালোবাসার সংসারে পাল তোলা নৌকা বেয়ে নাইয়া হওয়ার সাধ জাগে সবারই। কিন্তু আশা ও ধারণার সঙ্গে মিলে প্রেম বা প্রেমাস্পদ সব সময়ে মেলে না। পড়ে থাকে নিজস্ব দীর্ঘশ্বাস হাতের তালুতে, বুকের গভীরে বেদনার তীক্ষ্ণ বালুচরের মতো। দুনিয়া জুড়ে এখন সবকিছু দিনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। প্রেম বা ভালোবাসার মতো জটিল অনুভবও ফ্যাশনের পাশা খেলায় ডুবে গেছে।
ভালোবাসা দিবস কী ফ্যাশন? ভালোবাসা তো অন্তরের গভীরে প্রবহমান নিঃশব্দ স্রোতের মতো বয়ে যায়। ফ্যাশনে পরিণত হলে নিঃশব্দের আলো কেমন করে সম্পর্কের জাল বোনে? কিন্তু যে কোনোভাবেই হোক—ভালোবাসা বা প্রেম এখন ফ্যাশনের প্রজাপতি।
প্রতিবছর চৌদ্দ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ঘটা করে ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন করা হয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও একই দিনে ভালোবাসা দিবস পালন করা হয় নানা অনুষ্ঠান বা উৎসবের মধ্যে দিয়ে। বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন বা ভালোবাসা দিবস পালন শুরু হয় ১৯৯৩ সালে বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমানের প্রেরণায়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ভালোবাসা দিবস