
রোজায় বাজার শান্ত থাকবে এবার?
রোজা শুরু হতে বেশি বাকি নেই। এরই মধ্যে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের সংকট তীব্র। থেকে থেকে এটা অবশ্য চলছে কিছুদিন ধরেই। এরই মধ্যে একবার সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয় উল্লেখযোগ্যভাবে। তখন স্পষ্ট হয়েছিল, দাম বাড়াতেই এমন সংকটের সৃষ্টি। আগেও আমরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোয় সরকারের সম্মতি আদায়ে এ ‘প্রক্রিয়া’ ব্যবহৃত হতে দেখেছিলাম। চলমান সংকটেও কোনো কোনো দোকানে অবশ্য প্যাকেটজাত তেল মিলছে। কিন্তু কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকাকালে এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় বরং মিলত। এ বাজারে আরও কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। যেমন, সয়াবিনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অন্য পণ্য গছিয়ে দেওয়া।
‘সরবরাহ সংকট’ থাকলে এসব ঘটতেই পারে। কিন্তু সয়াবিন আমদানি তো কমেনি; পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও তেলের ঘাটতি নেই। আমদানি বরং গেল বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আরও আমদানি প্রক্রিয়াধীন। রোজায়ও সয়াবিনের কোনো সংকট হবে না বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তার মানে, পণ্যটি সরবরাহের কোনো এক পয়েন্টে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা অপরাধমূলক কাজ বলে বিবেচিত হবে কিনা, ওই প্রশ্ন উঠতে পারে।
প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের দাম সম্ভবত আরও বাড়ানো হবে এবং সরবরাহও হবে স্বাভাবিক। ততদিনে আমরা ভুলে যাব, নিকট অতীতেই কী ঘটেছিল। তবে তাদের পক্ষে ভুলে যাওয়া কঠিন, কোনো নিত্যপণ্যের দাম ৮-১০ টাকা বাড়লেও যাদেরকে এর ধকল সইতে হয়। অন্য কোনো নিত্যপণ্যের দাম একই হারে কমে এলে অবশ্য তারা কিছুটা স্বস্তি পাবে। সম্প্রতি সবজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসতে দেখা গেছে। চাষীদের জন্য এটা অবশ্য দুঃসংবাদ। ন্যূনতম দামটাও না পেয়ে ক্ষেতেই সবজি নষ্ট করে ফেলছে তাদের অনেকে।
রোজা আসতে আসতে শীতের সবজির সরবরাহ কমে আসবে অবশ্য। তখন সবজির পাশাপাশি সয়াবিন তেলের দামও বাড়বে হয়তো। খোলা সয়াবিনও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। ভালো দাম মিলছে বলে মাঝে প্যাকেট ভেঙে তা খোলা সয়াবিন হিসেবে বিক্রির প্রবণতা বেড়েছিল। পাম অয়েলও আমরা কম ব্যবহার করি না। শিল্পের উপকরণ হিসেবে এর ব্যবহার বিবেচনায় নিলে পাম অয়েলই বেশি পরিভোগ হয়ে থাকে। অবশ্য পাম অয়েল আমদানি হচ্ছে কম। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম নাকি বাড়তির দিকে। মাত্র কয়েকটি উৎসের ওপর এর সরবরাহ নির্ভরশীল বলে পাম অয়েলের বাজারে মাঝে মাঝেই অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন সয়াবিনের বাজারও হয় অস্থির।
ভোজ্যতেলে আমরা বহুলাংশে আমদানিনির্ভর বলে এর আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে বৈকি। তবে ডলারের দাম বেশি হলে আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল থাকলেও লাভ নেই। দেশে এমন একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছে অনেকদিন ধরে। তাতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুফলও মিলছে না। সয়াবিন তেলের দাম কম রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য এর কর-শুল্ক কমিয়েছে। এলসিসহ আমদানি প্রক্রিয়ায় বড় কোনো সংকটও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তারপরও সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত কেন, বোধগম্য নয়। সরকারের উচিত হবে জরুরিভাবে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া। খোলা সয়াবিন আর পাম অয়েলের দাম স্বাভাবিক রাখতেও উদ্যোগী হতে হবে। রোজায় ইফতার সামগ্রী তৈরিতে এগুলোর চাহিদা বাড়ে দেশব্যাপী। ইফতার তৈরির অন্যান্য উপকরণের বাজার স্বাভাবিক না থাকলেও সংকট দেখা দেবে। ঘরে-বাইরে যেখানেই ইফতার সামগ্রী তৈরি হোক; এর ব্যয় নিয়ন্ত্রণে না থাকলে জনজীবনে ছড়াবে অস্থিরতা।
সয়াবিন তেলের ‘সংকটে’ সরকার চাইছে দেশে উৎপাদিত রাইস ব্রান তেলের ব্যবহার বাড়াতে। তবে স্বাস্থ্যবান্ধব বলে প্রচার থাকলেও এ ভোজ্যতেল এখনও জনপ্রিয় হয়নি। দামও অপেক্ষাকৃত বেশি। টিসিবির কার্যক্রমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য রাইস ব্রান তেল বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। বেশ কমে মিলছে বলে এটা হয়তো গ্রহণ করছে স্বল্প আয়ের মানুষ। তবে তারা খুশি হয় প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল পেলে। সুখবর যে, কিছুদিন বন্ধ থাকার পর টিসিবির ‘ট্রাক সেল’ চালু হয়েছে। ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে থাকারাও এখান থেকে পণ্য কিনতে পারবে। সংকটকালে রাষ্ট্রীয় অর্থের এমন ব্যবহারে কারও আপত্তি নেই। বরং দাবি রয়েছে কার্যক্রমটি বিস্তৃত করার। কেননা বিতরণকৃত পণ্যের তুলনায় ক্রেতা অনেক বেশি।