
আমনের ক্ষতি পোষাতে বোরো উৎপাদনে করণীয়
বিভিন্ন মৌসুমে ধান চাষে দেশের কৃষকরা ঈর্ষণীয় অবদান রাখছে। এরমধ্যে নতুন জাতের ধান আবিষ্কারের গল্পও রয়েছে। তবে এবার কৃষকের অসহায়ত্ব ধরা পড়েছে প্রকৃতির কাছে। ২০২৪ সালের দুটি বন্যা কৃষককে যেমন হতাশ করেছে তেমনি ফলনেও ঘাটতি তৈরি করেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের আমন মৌসুমে ধানের ফলন হয়েছিল ১ কোটি ৬৬ লাখ টনের বেশি। আমনে চলতি অর্থবছরে ১ কোটি ৬৮ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বন্যা। বন্যা ঘরবাড়ির সাথে কৃষি জমিও নষ্ট করে। নষ্ট হয় কৃষকের ফসল।
২০২৪ সালের আগস্ট ও অক্টোবর মাসে ভারী বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধির অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার কারণে দেশে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়ে যায়। অপ্রত্যাশিত এই দুর্যোগ মোকাবিলায় দরকার ছিল পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা। প্রয়োজন ছিল পরবর্তী সিজনের ফসল যেন পরিপূর্ণ হয় সেইরূপ প্রস্তুতি ও কর্মপরিকল্পনা। তার চিত্রও মেলেনি সরেজমিনে।
সাম্প্রতিক দুটি বন্যায় আমনের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায় ধানের ফলন গতবারের তুলনায় কমে ১ কোটি ৪০ লাখ টনে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। খাদ্য ঘাটতি মেটাতে সরকার ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় আমনের প্রায় দুই লাখ হেক্টর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়।
আবার অক্টোবরের শুরুর দিকে শেরপুর ও ময়মনসিংহের আকস্মিক বন্যায় প্রায় এক লাখ হেক্টর আমনের ফসলি জমি ক্ষতির শিকার হয়। সব মিলিয়ে এবার আবাদি এলাকা কমেছে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর। এর ধারাবাহিকতায় বলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা আগেই ধারণা করেছিল, আমনের উৎপাদন গতবারের চেয়ে কমে নেমে আসতে পারে ১ কোটি ৪০ লাখ টনে।
২০২৪ সালের ১৬ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের ২৩টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নাটোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট এবং যশোর।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী ভয়াবহ এ বন্যায় আউশ, আমন ধান, শাকসবজি, আদা, হলুদ, ফলবাগান, মরিচ, পান, তরমুজ, পেঁপে, টমেটোসহ বিভিন্ন ফসলের ৯ লাখ ৮৬ হাজার ২১৪ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল যা একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ধানের উৎপাদনে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার কারণে আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আবার অনেক এলাকায় দেরিতে আবাদ করায় উৎপাদন হয়েছে কম।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বোরো উৎপাদন