
শহীদ আবরার ফাহাদের স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
আজ শহীদ আবরার ফাহাদের জন্মদিন। আমাদের এই ছোট ভাইটি ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধঘোষিত) নৃশংস নির্যাতনে শহীদ হয়েছিল। ফেনী নদীর পানি ভারতের উত্তোলনের বিরোধিতা করে ফেসবুকে সে একটি পোস্ট দিয়েছিল, সেটিই তার জন্য কাল হয়েছিল।
আমরা প্রতিবেশীদের জন্য দারুণ ভালো দেশ। উজানের পানিও তারা নিয়ে যাবে, আবার একমাত্র যে নদী বাংলাদেশ থেকে উৎপত্তি হয়েছে, তার পানিও আমরা দিয়ে দিই। ফলাফল, আমাদের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রতিবছর খরায় গড়ে ক্ষতি ২ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা (কালের কণ্ঠ, ১৬ নভেম্বর ২০২২) এবং বন্যায় গড়ে প্রতিবছর ক্ষতি হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা (জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর, ২৮ জুন ২০২২)। প্রাণহানির কথা তো বাদই দিলাম।
সেই ফেনী নদীর চুক্তি আজও বাতিল হতে দেখলাম না। অবশ্য ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী কোনো চুক্তিই এখনো বাতিল হয়নি। এমনকি সবার সামনে প্রকাশ করাও হয়নি। এই সরকার কাদের বাঁচানোর জন্য এই চুক্তি লুকিয়ে রেখেছে?
এটা তো গেল দেশবিরোধী চুক্তির কথা, আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কি ছয় মাসে এমন কোনো কাজ করেছে, যা নদীবান্ধব হিসেবে বিবেচিত হবে? আমি অনেক খুঁজেও কোনো নতুন নদী খনন প্রকল্প দেখতে পেলাম না। খাল পুনঃখনন কিছুদিন আগে শুরু হলো, তা শুধু ঢাকার জন্য। গোটা দেশে বিভিন্ন জেলায় নদী ও খাল পুনরুদ্ধার করা হবে বলে শুনে আসছি। কিন্তু তা কখন শুরু হবে? আগের সরকার তো নদী ও খালখেকো ছিল, এখনকার সরকার কী করছে? যদি কোনো সরকারি কর্মচারীর জন্য কাজ আটকে থাকে, তাঁদের কেন রাখা হয়েছে? আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অজুহাত আর কত শুনতে হবে আমাদের?
ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদীর ৫৩টিতেই বাঁধ দেওয়া হয়ে গেছে। আরও নতুন নতুন বাঁধের প্রকল্প নিতে যাচ্ছে ভারত। দেশটির ন্যাশনাল রিভার লিংকিং প্রজেক্টের (এনআরএলপি) আওতায় ৯ হাজার ৬০০ কিলোমিটার খাল খননের মাধ্যমে নিজ সীমানার ৪৪টি নদীকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। আমরা নিজেদের আত্মরক্ষায় কী করছি?
১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত আন্তর্জাতিক জলপ্রবাহ-সংক্রান্ত কনভেনশনে আমরা এখনো স্বাক্ষর করিনি। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকে তাদের আমরা বলে এসেছি এই কনভেনশনে স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ আমরা এখন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না।
এই কনভেনশনে স্বাক্ষর না করার কারণে আমরা আমাদের বিভিন্ন ক্ষতিপূরণ দাবিও করতে পারি না। সামনে আরেকটি বর্ষা আসছে, আবারও বন্যায় ডুববে দেশের অনেক এলাকা। একবার নয়, কয়েকবার করে ডুববে। কিন্তু আমাদের সরকার এর জন্য কী করছে?
এই ছয় মাসে যৌথ নদী কমিশনের কোনো বৈঠক কি হয়েছে? নদী কমিশন কি পুনর্গঠিত হয়েছে? আমরা কি আমাদের চাওয়া তাদের জানিয়েছি? পত্রিকায় এ–সংক্রান্ত কিছু দেখিনি।
কয়েক দিন আগে প্রথম আলোয় তিস্তার নদী ভাঙন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। আমরা জানতে পারলাম, তিস্তা মহাপরিকল্পনার মুলা ঝুলিয়ে এখানে কোনো কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। বাস্তবতা হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো সমীক্ষাও হয়নি। কিন্তু চীন এখনো সেখানে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু সে ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা কী, তা আমরা এখনো জানি না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জন্মদিন
- পানি চুক্তি
- আবরার ফাহাদ