![](https://media.priyo.com/img/500x/https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-02-11%2Fx9r8k7x9%2Fboimelachild.jpg?rect=9%2C0%2C869%2C579&w=622&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
শিশুসংবেদন বইমেলা হোক, হবে তো?
প্রথম সপ্তাহেই বইমেলায় গিয়েছি। হাঁটছিলাম লিটল ম্যাগ চত্বরের কোল ঘেঁষে। সেখান থেকেই চোখ পড়ে আজিজুলের দিকে। আজিজুল এই দোকান থেকে সেই দোকান ঘুরছে, কেউই তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না। কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর থেকে অনেক পথ পেরিয়ে বইমেলায় এসেছিল আজিজুল। ক্লাস সেভেনের ছাত্র সে। কেরানীগঞ্জের হিজলায় তার নানিবাড়ি। সেখানে যাওয়ার কথা বলে চলে এসেছে বাংলা একাডেমির বইমেলায়। ট্র্যাপডোর, হোয়াট ইজ টাইম...এ রকম পাঁচ থেকে সাতটি বই তার কেনার ইচ্ছা। বইয়ের নাম জানে, কিন্তু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম তার জানা নেই। তাই কোথায় খুঁজবে, কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
আজিজুলের দুরবস্থা দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফটিক’ গল্পে ফটিকের মামার কথা মনে পড়ল। গল্পে যেমন আছে, ‘...বালককে জিজ্ঞাসা করিলেন, “চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।”
‘বালক ডাঁটা চিবাইতে চিবাইতে কহিল, “ওই হোথা।” কিন্তু কোন্ দিকে যে নির্দেশ করিল, কাহারও বুঝিবার সাধ্য রহিল না।
‘ভদ্রলোকটি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথা।”
‘সে বলিল, “জানি নে?”’
ফটিকের মন খারাপ ছিল, তাই শহর থেকে আসা আগন্তুককে সে সাহায্য করেনি। কিন্তু আজিজুলদের প্রতি আমাদের বইমেলার বিক্রেতাদের কেন এত অসহযোগিতা! আজিজুল সজ্জিত পোশাকে আসেনি বলে? ‘মফস্সলের’ মানুষ বলে? নাকি সে শিশু বলে? শিশুদের সঙ্গে বইমেলা–সংশ্লিষ্টদের ব্যবহার মানুষের মতো হতে হবে। প্রশিক্ষণ, বিশেষ করে শিশুবান্ধব আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়া কাউকে মেলার চেয়ারে বা দোকানি–স্বেচ্ছাসেবী হতে দেওয়া ঠিক হবে না।
মেলায় শিশুকর্নার হয়েছে। শিশুদের জন্য আলাদা দিন ও সময়ের ঘোষণা এসেছে। কিন্তু মনে হয়, এসবই মন থেকে নেওয়া কোনো উদ্যোগ নয়। একবার ঝড়বৃষ্টির পর যখন বালু–ইট ফেলার প্রয়োজন হয়েছিল, তখন শিশুদের কর্নারের কথা সবাই বেমালুম ভুলে বসেছিল। আসলে দুটি উদ্দেশ্য মাথায় রেখে মেলার আয়োজন হয়। প্রথমটি নিশ্চয়ই বাণিজ্যিক। দ্বিতীয়টি হয়তো সাধারণ মানুষের বিনোদন।
আমাদের বইমেলার দিকে গভীরভাবে তাকালে মনে হবে, এটা ক্রমে যেন আয়োজকদের বোঝা হয়ে উঠছে। সম্ভাবনা সত্ত্বেও বইমেলায় না হচ্ছে ব্যবসা, না হচ্ছে বিনোদন কিংবা একুশ স্মরণ। মেলাটি শিশুদের টানতে পারছে না। এখনকার পাঠক আগামীর ক্রেতা শিশুদের টানতে না পারলে মূল ভিতটাই যে দুর্বল হয়ে যাবে। বইমেলায় শিশুদের একরকম অঘোষিত বার্তায় বলে দেওয়া হয়, ‘সব দিন বড়দের, তোমাদের কয়েক ঘণ্টা।’
কয়েক বছর আগে এ নিয়ে মেলায় আসা শিশুদের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে কথা বলেছিলাম। অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেছিল, ‘বইমেলায় ছুটির দিনে শিশুপ্রহর থাকলেও সেটা খুব কম সময়ের জন্য। মেলায় শিশুদের আকর্ষণীয় আরও কিছু যদি থাকত! এই যেমন আনন্দ করার জন্য শিশুচত্বরের মধ্যেই স্থায়ী শিশুকর্নার। শিশুদের নিয়ে লেখা গল্প, ছড়া স্বয়ং লেখকদের মুখে শোনার ব্যবস্থা থাকলে কত্ত মজা হতো!’
ঢাকার এক ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলছাত্রী বলেছিল, ‘বইমেলায় যারা অনেক দূর থেকে আসে, তাদের জন্য একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। আর মেলার সময়টা বেলা তিনটা থেকে না করে সকাল থেকে শুরু করলে সময় পাওয়া যেত।’
একাডেমি কি কখনো শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করেছে, তাদের মতামত জানতে চেয়েছে? বছর দুয়েক আগে শিশুদের নিয়ে ভাবেন—এমন নাগরিকদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি প্রকাশক, লেখক, প্রচ্ছদশিল্পী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য আলাদাভাবে সুপারিশগুলো তৈরি করে একাডেমিকে দিয়েছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শিশু প্রহর
- অমর একুশে বইমেলা