![](https://media.priyo.com/img/500x/https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/09/98%E0%A7%8E8-67a7d3b210cf6.jpg)
‘ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড ডিভাইডেড উই ফল’
শিরোনামে উল্লিখিত প্রবাদটি কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে রিকশাযোগে যেতে এক প্রাচীরের গায়ে লেখা দেখলাম। রংটা চকচকে। বুঝলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের লেখা। প্রবাদটি আমাদের সমাজে বহুল ব্যবহৃত। আমরা সময়ের প্রয়োজনে প্রবাদটি উল্লেখ করি, কাজের সময় ভুলে যায়। বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ ও দেশ খুব জটিল ও অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। ভবিষ্যৎ পুরোটাই অনিশ্চিত কিংবা যাহা পূর্বং তাহাই পরং কিংবা আরও ভয়ংকর। পাশের দেশের চরণদাসের সুযোগ্য উত্তরাধিকার চরণদাসী, সহচর-সহচরীদের নিয়ে সেখানে অবিরাম খেলে চলেছে; দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার সব চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এ দেশে বসবাসরত, কেউবা পদাধিষ্ঠিত, তাদের খেলোয়াড়রা খেলছে ক্ষমতা দিয়ে ও টাকা ছিটিয়ে কৌশলে। প্রতিপক্ষ সাধারণ দেশপ্রেমী মানুষ, ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল, সরকার যার যার অবস্থান থেকে আঘাত সহ্য করে যাচ্ছে। চিৎকার-চেঁচামেচি করছে; প্রত্যাঘাত করার ক্ষমতা সীমিত। অগত্যা যত দোষ ও ব্যর্থতার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত ও ‘কর্তব্য পালন যথেষ্ট করেছি’ বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করছি। কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছি। মুখে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখার কথা বললেও কাজে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমাদের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত-কোনো দলের তাঁবেদারি নয়, দেশের কল্যাণ। ইতোমধ্যেই তেপ্পান্ন বছর পার হয়ে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারেরই বা কী এমন ঠেকা পড়ে গেছে যে, নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে তারা অন্যের সমালোচনা শুনতে চাইবে! তারা তো রাজনীতিকে ব্যবসা হিসাবে নিতে চায় না। দেশের প্রয়োজনে দায়িত্বে এসেছে। ইউনূস সরকারই বা ফ্যাসিস্ট হাসিনা-অনুসারীদের বাড়িঘর ভাঙচুরের দায় নিতে যাবে কেন! এসব অসমাপ্ত বিপ্লবেরই অংশ। তারা দেশকে যথাসম্ভব সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে চলে যেতে চেয়েছেন; এটাই যথেষ্ট নয় কি? সরকারে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের কায়েমি স্বার্থবাদী সদস্য তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না, তাতে তাদের কিইবা করার আছে! সচেতন মানুষ তা বোঝেন। এটাকে আমরা শিক্ষকতার ভাষায় ‘লিমিটিং ফ্যাক্টর’ বলি।
দীর্ঘ বছর ধরে দলবাজি করে সুপরিকল্পিত উপায়ে সাজানো বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে শৃঙ্খলা এত অল্প সময়ে ফিরিয়ে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। অধিকাংশ বিভাগই এক খুরে মাথা মোড়ানো। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা টিমে কেউ কেউ অযোগ্য থাকতেও পারেন, সবাইকে একযোগে অদক্ষ বলাটা সমীচীন নয়। আরেকটা অতি মূল্যবান বিষয় অনেকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না-পতিত লুটেরা সরকার এদেশের সামাজিক শিক্ষা ও সমাজের মূল্যবোধ দীর্ঘদিনে পুরোটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। এর প্রভাব ও মেরামত সুদূরপ্রসারী। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা রাষ্ট্র সংস্কারে হাত দিয়েছেন, সামাজিক এ অশুভ পরিবর্তনের বাস্তবতা তাদের ক’জন বিবেচনায় এনে বিভিন্ন বিষয় সংস্কার করতে চাচ্ছেন, সে বিষয়ে যথেষ্ট চিন্তার অবকাশ রয়েছে।
এ পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসন কোনোদিনই কি তাদের দেশবিরোধী গর্হিত কৃতকর্মের দায় স্বীকার করতে চেয়েছে? কৃতকর্মের অনুশোচনা না থাকলে দায়ইবা স্বীকার করবে কেন? অনুশোচনা আসে আত্মোপলব্ধি থেকে, সে ক্ষমতা কি তাদের বিধাতা দিয়েছেন? অতীত বাদ দিয়েও এই ষোল বছরে তাদের প্রকাশ্য দুর্নীতি, লুটপাট, হত্যা-গুম, নির্বিচার অত্যাচার, ব্যাংক লুট, দেশবিক্রি, মিথ্যাচার, গণহত্যার আমলনামা সুস্থ কোনো মানুষ কি অস্বীকার করতে পারে? বাস্তবে তাদের স্বরূপ উদ্ঘাটিত হলো।
এখন শেখ হাসিনা যেহেতু দেশ লুটপাট করে তার দলবলসহ প্রভুর কোলে ফিরে গেছেন, তারা এবার ক্ষান্ত দিলেই পারতেন। এদেশে রয়ে যাওয়া তাদের চাটুকাররাও তা বুঝতে পারলে ভালো হতো। এদেশের প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশের লোলুপ দৃষ্টি সেই ’৪৭ সাল থেকে আছে। ইতিহাস তা-ই বলে। তারাও এত সহজে নিবৃত্ত হওয়ার নয়। কয়লার ময়লা ধুলে যায় না। সুতরাং আওয়ামী লীগের যে কেউ এদেশে এসে আবার সবার জন্য দেশ গড়বে, এটি অচিন্তনীয়। তাছাড়া কোনো মাল ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ হলে তাকে কোনোভাবেই আর ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ বানানো যাবে না। তারা প্রভুর দাসত্বকেই অগ্রাধিকার দেবে। এ নিয়ে আমাদের না ভাবাই উচিত। অতীতকে নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করে ওই অধ্যায় চুকিয়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নিজ দেশের অস্তিত্ব ও কল্যাণ নিয়ে ভাবাই সময়ের দাবি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন