
সার, সেচ ও ফসল সংরক্ষণ নিয়ে সংকট কেন
বোরো মৌসুমের শুরুতেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন কৃষক। তাঁরা চাহিদা অনুযায়ী সারা পাচ্ছেন না, যাও পাচ্ছেন, সেটা আবার সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজি ৩ থেকে ৮ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে।
প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপির সরকার-নির্ধারিত মূল্য ২৭ টাকা, ডিএপির মূল্য ২১ টাকা ও এমওপির মূল্য ২০ টাকা হলেও সমকাল-এ প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে কৃষককে প্রতি কেজি ইউরিয়া ২৯-৩৩ টাকা, টিএসপি ৩০-৩৫ টাকা, ডিএপি ২৫-৩৫ টাকা ও এমওপি ২৫-৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। (‘ধান আবাদের সুসময়ে চাষির দুঃসময়’, সমকাল, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)
বীজ, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্যে এমনিতেই কৃষক সংকটে রয়েছেন। সরকার-নির্ধারিত সারের মূল্যও বেশি। কারণ, আগের সরকারের আমলে ২০২২ সালের আগস্টে ইউরিয়ার দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালে সব ধরনের সারের দাম প্রতি কেজি ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়। এভাবে উপর্যুপরি মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকেরা এমনিতেই চাপে রয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল সারের দাম কমানোর ব্যবস্থা করা। সেটা তো তারা করছেই না, উল্টো সরকার-নির্ধারিত দামেও সার বিক্রি নিশ্চিত করতে পারছে না। বোরো থেকে দেশের চালের জোগানের একটা বড় অংশ আসে।
এ সময় সারের সংকট হলে এবং নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি নিশ্চিত করতে না পারলে শুধু যে কৃষকই সংকটে পড়বেন, তা নয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, এমনিতেই বাড়তি খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
এটা শুধু যে বোরো মৌসুমে ঘটছে, তা না। এই মৌসুম শুরুর আগে রবিশস্য চাষ করতে গিয়েও কৃষক চাহিদামতো এবং সরকার-নির্ধারিত মূল্যে সার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
আলু, সবজি, ডাল ও তেলবীজ চাষের জন্য প্রসিদ্ধ উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলায় খোঁজ নিয়ে প্রতিটিতেই চাহিদা অনুযায়ী সারসংকটের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। কোথাও কোথাও সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি আদায়েরও অভিযোগ করেছিলেন কৃষক। এখনকার মতো সে সময়ও সারসংকট ও উচ্চমূল্যে বিক্রির সমস্যাটি অস্বীকার করেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। (‘সারসংকটে নাকাল কৃষক, মানতে নারাজ মন্ত্রণালয়’, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪)
অথচ সরকারের উচিত ছিল সারসংকটের বিষয়টি অস্বীকার না করে সংকট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। বিগত সরকার যতই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবি করুক, বাস্তবতা হলো বাংলাদেশকে বছরে এক কোটি টনের বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। কাজেই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এ রকম অবস্থায় সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণের বাড়তি মূল্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- খাদ্য নিরাপত্তা
- বোরো উৎপাদন