ছাত্রদের নতুন দল ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্ন

www.ajkerpatrika.com ড. মঞ্জুরে খোদা প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৬

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে বলেন, ‘তরুণেরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নেই। তারা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদের রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেই সব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তির সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা এটা রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বলব, ছাত্রদের স্বচ্ছ অভিপ্রায় থাকবে।’


‘... যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তির সুযোগ খুঁজছে।’ ড. ইউনূসের বক্তব্যটি গভীর তাৎপর্য ও ইঙ্গিতপূর্ণ। এ কথার ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, বিগত দিনের শাসক যাঁরা ছিলেন...প্রধানত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেই ইঙ্গিত করছেন। তাঁর এ কথার সঙ্গে আমি খুব দ্বিমত পোষণ করি না। কেননা, বিগত দিনে ক্ষমতা দখল করে রাজনীতিকেরা যা করেছেন, তার পুনরাবৃত্তি হোক, সেটা এ দেশের জনগণ চায় না। কিন্তু তা না হওয়ার পথপ্রক্রিয়া কী? কথিত ছাত্ররা দল গঠনের মাধ্যমে সেই অবস্থা পরিবর্তনের যে কথা বলছে, সেইভাবে কি সেটা হবে? সম্ভব? যে প্রেক্ষাপট ও প্রক্রিয়ায় কাজটি করার কথা বলা হচ্ছে, মনে করি সেটা ভালোর চেয়ে আরও ক্ষতি ও জটিলতার কারণ হবে।


কেন বলছি সে কথা? ছাত্ররা কোনো একক শক্তি নয়। তারা বিভক্ত ছিল, আছে অনেক আগে থেকেই। জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত সংগঠন যেমন ছাত্রদল, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে আদর্শগত বিরোধ বিদ্যমান। ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন, আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছিল। তেমন একটি সময়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ দেশের সব ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রদের একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছিল, যার মাধ্যমে গত বছর এক অভাবনীয় অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। এটা তাদের একটি বিশাল অর্জন। কিন্তু এই সংগঠন যখন রাজনৈতিক দল গঠন ও ক্ষমতা দখলের বাসনা পোষণ শুরু করল, তখন থেকেই সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকল। কেননা, সেই আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকা অন্যান্য সংগঠন ও সাধারণ ছাত্ররা তাদের পাশ থেকে সরে পড়ল।



শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিরপেক্ষতার’ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের আরেকটি ১/১১-র প্রেক্ষাপটের সম্ভাবনা তৈরির মন্তব্যে এই বৈরিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দল গঠন করা যে কারও গণতান্ত্রিক অধিকার। তাতে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু কারা, কোন সময়ে ও প্রেক্ষাপটে, কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে সেই কাজ করছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ইউনূস সরকারের অধীনে যাঁরা এ কাজ করছেন, তাঁদের এই তৎপরতাকে অন্যান্য রাজনৈতিক দল স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। কারণ, দল গঠন শুধু নিছক কোনো দল নয়, তারা ক্ষমতার প্রধান দাবিদার বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, তারা ইউনূস সরকারকে ব্যবহার করবে এবং তাদের প্রতি তিনি তাঁর শুভেচ্ছার কথা খোলামেলাভাবেই বলছেন।


রাজনীতি একটি মহান আদর্শ ও পেশা। এর মাধ্যমে দেশ-জাতির প্রভূত উন্নতি ও সমৃদ্ধি সম্ভব, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নেতৃত্ব। নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনায় দেশ-জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটে; যার মধ্য দিয়ে সভ্যতা, মানবতা সামনের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু তা কথায়, ভাবনায় ও তত্ত্বে যতটা সুন্দর-সাবলীল, বাস্তবে ততটাই রূঢ় ও কঠিন। ম্যাকিয়াভেলির মতে, ‘শাসনক্ষমতার বৈধতা কোনো নৈতিকতার মাপকাঠিতে আবদ্ধ নয়; কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাই এখানে মূল বিষয়। যার ক্ষমতা আছে, সে-ই শাসন করবে, নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। ক্ষমতা অর্জন আর ক্ষমতা রক্ষা করাই রাজনীতির মূলনীতি। ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার দিয়েই জনগণের আনুগত্য অর্জন করতে হয়। রাজনীতি মানেই হলো ক্ষমতা “গ্রহণ আর প্রয়োগের” নীতি।’ কথাগুলো শুনতে অনেক কঠিন ও রূঢ় মনে হলেও উপমহাদেশের রাজনীতির নিয়তি এই সত্যেরই প্রতিধ্বনি।


নতুন রাজনৈতিক দল গঠন, ভবিষ্যতে নির্বাচন ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক সমীকরণটা কেমন হবে? আমার পর্যবেক্ষণ, নির্বাচনী দৌড়ে বিএনপি সুবিধাজনক স্থানে আছে, তারপর ভোটের হিসাবে থাকবে আওয়ামী লীগ (?), জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থী দল ও বৈবিছাআ’র নবগঠিত দল শক্ত অবস্থানে থাকবে এবং বামসহ অন্যরাও। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী জোট-ঐক্যের সমীকরণ হতে পারে (১) বিএনপি ও তাদের সঙ্গে থাকা দলসমূহ, (২) জামায়াত ও ইসলামপন্থীরা এবং বৈবিছাআ’র নতুন দল, (৩) আওয়ামী লীগ (?) ও তার মিত্ররা যদি থাকে, (৪) বামফ্রন্ট ও মধ্যপন্থীদের ছোট ছোট দল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও