রাসায়নিক কীটনাশকের বিকল্প প্রয়োজন
কীটনাশক কীটপতঙ্গ মারার জন্য এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। কীটনাশক তিনভাবে পাওয়া যায়। গুঁড়া, তরল ও অ্যারোসল। আমাদের দেশে পাঁচ ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
এগুলো হলো কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, পতঙ্গনাশক ও ইঁদুরনাশক। বাংলাদেশে ৩৭৭টি কীটনাশক বাজারজাতকরণের জন্য নিবন্ধনকৃত। এসব কীটনাশকের সবই কমবেশি বিপজ্জনক। এর মধ্যে বেশি বিপজ্জনক রিনকর্ড, সিমবুন, সুমিসাইডিন, হেপ্টাক্লোর, থায়াডিন, ডিডিটি ইত্যাদি।
কীটনাশক স্প্রে করে দেওয়া হলে তার ৯৮ ভাগেরও বেশি লক্ষ্যবস্তুর বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু প্রয়োগের ক্ষেত্রেই নয়, দূরবর্তী জলজ পরিবেশ, চারণ এলাকা ও মানব বসতি স্থানেও বাহিত হয়। একটি তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর ৬০ ভাগেরও বেশি কৃষিজমি কীটনাশক দূষণের ঝুঁকিতে এবং ৩০ ভাগেরও বেশি জমি উচ্চ ঝুঁকিতে। বাংলাদেশে কীটনাশকের ব্যবহার আজকের নয়।
সাত দশক ধরেই এর ব্যবহার চলছে। বাংলাদেশে ২০২৩ সালে কীটনাশকের ব্যবহার ছিল ৩৯ হাজার টন। ১৯৭২ সালে আমাদের দেশে কীটনাশকের ব্যবহার ছিল চার হাজার টন। ২০০৮ সালে কীটনাশক ব্যবহার হয় ৪৯ হাজার টন। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কীটনাশকের ব্যবহার ছিল ৩৭-৩৮ হাজার টন।
এসব কীটনাশক ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও ব্যবহারবিধি থাকলেও বেশির ভাগ কৃষক তা জানেন না এবং মানেন না। বলা আছে, কীটনাশক ব্যবহারের সময় মুখে মাস্ক পরতে হবে। বাতাসের উল্টা দিকে প্রয়োগ করা যাবে না। শরীরের কোনো অংশে যেন কীটনাশক না পড়ে সে জন্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা রাখতে হবে। একটি গবেষণা মতে, বাংলাদেশে ৯৩ ভাগ কৃষকই সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করেন। এসব কারণে তা মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। একদিকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।
রাসায়নিক কীটনাশকের কিছু আছে, যা ব্যবহারের পর তিন থেকে ২১ দিন পর ফসল তোলা যায়। আবার কিছু রাসায়নিক কীটনাশক আছে, যেটি ব্যবহার করলে ছয় মাস পর ফসল তুলতে হয়। আমরা তা মানছি না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কীটনাশক প্রয়োগের দু-এক দিনের মধ্যেই আমরা তা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছি। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারে উৎপাদন বাড়লেও পরিবেশ ও মানুষের অনেক ক্ষতি করে। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারে মাটি, পানি, বাতাস দূষিত হয়। পোকামাকড় মেরে ফেলার কারণে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এর ফলে ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগ দেখা যায়। ডিডিটি, অর্গানোফসফেট ব্যবহারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত লিভার, ফুসফুস ও পাকস্থলীতে ক্যান্সার হয়। শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমার মতো সমস্যাও হতে পারে। এটি ফুসফুসে গিয়ে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা শ্বসনতন্ত্রের ক্ষতি করে। শ্বাসকষ্টের এসব সমস্যা দেখা যাচ্ছে বেশি গ্রামের কৃষকদের। এ ছাড়া পারকিনসন রোগ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, স্নায়বিক দুর্বলতা প্রভৃতিও হতে পারে। কীটনাশক ব্যবহার থেকে পুরুষদের বীর্য উৎপাদন হ্রাস ও শুক্রাণু কমে যেতে পারে। নারীদের মাসিক সমস্যা, গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের সমস্যা হতে পারে। ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্মগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুর বুদ্ধিমত্তার হ্রাস ঘটে। এমনকি শিশুর আচরণগত নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- কীটনাশকের ব্যবহার