পোশাকশিল্পের সংকট কাটাতে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন

কালের কণ্ঠ ড. সুলতান মাহমুদ রানা প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১১

গত ২৭ জানুয়ারি কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ‘বাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় পোশাক খাত’ শিরোনামের  প্রতিবেদনটি পড়ে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে উঠলাম। আমরা দীর্ঘদিন থেকে জানতাম যে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকশিল্পে বিশ্বের বুকে অনন্য এক অবস্থান ধরে আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই ভালো খবরটি আমরা কিছুতেই পাচ্ছি না। ক্রমেই আমাদের ভালো খবরটি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্প বিরাট এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে বেশ কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংকট আরো বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রম খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকায়, উৎপাদন খরচ কমাতে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য দেশটি ভালো অবস্থানে ছিল। তা ছাড়া বাংলাদেশের পোশাকশিল্প প্রাথমিক তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে উচ্চমানের, ফ্যাশন-প্রচারিত পোশাক পর্যন্ত বিস্তৃত পরিসরের পোশাক উৎপাদন করে।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে স্থানীয় রপ্তানিকারকরা সময়মতো উৎপাদন, চালান, কাঁচামাল আমদানি এবং পরিবহনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ায় কয়েকটি আন্তর্জাতিক পোশাক খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে কাজের আদেশ স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৪ সালে দেশের তৈরি পোশাক উদ্যোক্তারা শ্রমিক অসন্তোষ, ডলারের ঘাটতি, জ্বালানিসংকট এবং সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়ার মতো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং এখন তারা আশঙ্কা করছেন যে এই বছরে সমস্যাগুলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এমনকি ধারণা করা হচ্ছে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা প্রতিকূল পরিবেশ আগামী দিনে এই খাতকে আরো অস্থিতিশীল করতে পারে।


টেক্সটাইল ও পোশাক অফিসের (OTEXA) তথ্য থেকে দেখা যায় যে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের চালান ৩.৩১ শতাংশ কমে ৬.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।



প্রতি ইউনিটের গড় দামও কমেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৩.২৭ মার্কিন ডলার থেকে এই সময়ে ৩.১৩ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। ইউরোস্ট্যাটের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি থেকে অক্টোবর) ইইউতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে দামের দিক থেকে ৪.৯২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় রপ্তানিকারকরা সময়মতো উৎপাদন, রপ্তানি, কাঁচামাল আমদানি ও পরিবহন সংকটে পড়ায় বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ড আমাদের দেশ থেকে কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) তুলে নিয়েছে। এ ছাড়া দুই বছর ধরে চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি বড় কারখানা সক্ষমতার তুলনায় কম উৎপাদনে বাধ্য হয়।


এই মুহূর্তে ভারত সরকার নিজ দেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করায় বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে আরো বাধার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে তৈরি পোশাকের বাজার ৮০০ বিলিয়ন ডলার। গত বছর দেশে গণ-আন্দোলনের সময় কিছু কার্যাদেশ ভারতে চলে যাওয়ায় বাজার দখলের বিষয়ে নয়াদিল্লি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। ইউএস অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের তথ্য অনুসারে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে হয় ছয় দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ভারতের পোশাক রপ্তানি চার দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে হয় চার দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনছেন ইউরোপের এক শীর্ষ পোশাক বিক্রেতা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিককে জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কিছু কার্যাদেশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেছে।


এই মুহূর্তে দেশের পোশাকশিল্পের প্রাণকেন্দ্র গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার শিল্পাঞ্চলে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। নিরুপায় হয়ে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প গ্রুপের শ্রমিকরা পেটের দায়ে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গণসমাবেশ করছেন। রাজপথে আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে বিশৃঙ্খল ও অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আরো খারাপ হয়ে উঠছে। দেশের অর্থনীতিও ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বেসরকারি সব খাতে নানা প্রতিবন্ধকতা দানা বেঁধে উঠেছে। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। দফায় দফায় কর কাঠামোর পরিবর্তন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সংকট আরো বাড়িয়ে তুলেছে। শিল্প খাতে এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও