যেসব ভ্রান্তি এবং অপ্রাপ্তি নিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলা ভাষা

প্রথম আলো তারিক মনজুর প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:০৫

আমাদের রয়েছে ভাষার জন্য রক্তদানের ইতিহাস। এই ইতিহাস আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষার গৌরব বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে বাংলা ভাষার রয়েছে বিস্তৃত, সমৃদ্ধ সাহিত্য। এই সাহিত্য হাজার বছরের বেশি পুরোনো। তবে বেদনাদায়ক হলেও সত্যি, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এত বছর পরেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আনা সম্ভব হয়নি। অনেক ধরনের অপ্রাপ্তির আফসোস আছে। একই সঙ্গে আছে ভাষাবিষয়ক কিছু ভ্রান্তি। 


বানানের ভুল-শুদ্ধ


কোনো কোনো ক্ষেত্রে শব্দের লিখিত রূপের একাধিক বানান দেখা যায়। এর মধ্যে একটিকে ‘শুদ্ধ’ আর অন্যগুলোকে ‘ভুল’ বলার একটি প্রবণতা আছে। অথচ বানানের নীতি কিংবা রূপান্তরের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোনোভাবেই এমনটি বলা যায় না। যেমন ‘গোরু’ বানানে ও-কার দেওয়ার মানে এই নয় ও-কার ছাড়া বানানটি ভুল। আবার ‘ষ্টেশন’, ‘ঠাণ্ডা’ ইত্যাদি বানানে মূর্ধন্য-ণ বা মূর্ধন্য-ষ থাকলে তা ভুল বানান নয়। বরং একসময় এমন বানানেই লেখা হতো। বানানের প্রচলিত রূপকে বদলে ফেলার কারণে এসব সংকট তৈরি হয়। সুতরাং বানানের ক্ষেত্রে ভুল বা শুদ্ধ না বলে বরং বলা উচিত, বর্তমানে ‘প্রচলিত’ বা ‘অপ্রচলিত’ বানান। আরও ভালো হয় বানানের সর্বশেষ গৃহীত রূপটিকে ‘প্রমিত’ বলা হলে। 


তৎসম-অতৎসম শব্দ


ব্যাকরণ বইয়ে আছে, যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদেরকে তৎসম শব্দ বলে। অথচ এই ধারণার বদল ঘটে গেছে প্রায় শত বছর আগেই। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যুক্তি ও উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, বাংলা শব্দ সংস্কৃত থেকে আসেনি। তাঁর মতে, বাংলা শব্দ এসেছে প্রাকৃত বা সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা থেকে। এমনকি জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন, যিনি ভারতীয় উপভাষা নিয়ে বিস্তৃতভাবে কাজ করেছেন, তিনিও মনে করেন বাংলা ভাষার জন্ম প্রাকৃত ভাষা থেকে। অথচ প্রচলিত ব্যাকরণ বইগুলো এখনো তৎসম-তদ্ভব শব্দের পরিচয় দিতে গিয়ে সংস্কৃত থেকে আগমনের সূত্র টেনে চলেছে!


 


উপভাষা ও আঞ্চলিক ভাষা


আমাদের স্কুলপাঠ্যে উপভাষা বলতে অঞ্চলবিশেষের ভাষাকে বোঝানো হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষও মনে করে থাকেন, উপভাষা আর আঞ্চলিক ভাষা একই। অথচ উপভাষা শুধু আঞ্চলিক ভাষাবৈচিত্র্য নয়, এটি একই সঙ্গে সমাজের মানুষের ধর্ম, শ্রেণি, পেশা, বয়স, লিঙ্গসহ সব ধরনের ভাষাবৈচিত্র্যকে নির্দেশ করে। সূক্ষ্মতর অর্থে বলা যায়, প্রত্যেক মানুষই এক একটি উপভাষা বহন করে। সুতরাং আঞ্চলিক ভাষা প্রকৃতপক্ষে উপভাষার বহু রকমফেরের একটি। তা ছাড়া একটি আঞ্চলিক ভাষারও একাধিক রূপভেদ থাকতে পারে এবং তার মধ্যে একটি রূপকে প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হয়। আর ভাষা কতটুকু আলাদা হলে তাকে উপভাষা কিংবা ভিন্ন ভাষা বলা যাবে, এরও কোনো সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। এর সঙ্গে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কও জড়িত।


ভাষার প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ


ভাষার অনেক প্রয়োগই প্রচলিত ব্যাকরণ সমর্থন করে না। সাধারণ বিবেচনায় সেগুলোকে ‘অপপ্রয়োগ’ বলা হয়। কিন্তু ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষার কোনো রূপকেই অপপ্রয়োগ বা প্রয়োগ-অশুদ্ধ বলা যায় না। বহুল ব্যবহারের কারণে বরং এসব প্রয়োগকেই ভাষার ব্যাকরণে নতুন করে সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন পড়ে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে আমাদের চাকরির পরীক্ষাগুলোতে ভাষার অপপ্রয়োগের নামে কিছু প্রশ্ন প্রায় নিয়মিতভাবেই দেখা যায়। প্রশ্নের এসব নমুনাও এতই গতানুগতিক যে সেই জ্ঞান ভাষার প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। 


প্রমিত উচ্চারণ


ভাষার লিখিত একটি রূপের মতো উচ্চারিত একটি রূপকে প্রামাণ্য বা প্রমিত ধরা হয়। অভিযোগ আছে, অনেক বাংলা শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রমিত উচ্চারণে কথা বলেন না। অথচ স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের এ ধরনের অনুশীলন করানো দরকার। এটা শিশু পর্যায়ে করা সম্ভব না হলে পরবর্তী সময়ে প্রমিত উচ্চারণে কথা বলার জন্য তাকে রীতিমতো পরিশ্রম করতে হয়। দুঃখজনক ব্যাপার, একদিকে আমরা প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে না পারার অভিযোগ করছি, অন্যদিকে এর প্রতিফলন দেখার জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিইনি। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও