ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সাত কলেজ কি হাঁপ ছাড়ল

প্রথম আলো তারিক মনজুর প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:২৭

২৭ জানুয়ারি ঢাকার সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটেও এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকার আশা করা যায়। তার মানে, ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধিভুক্ত সাত কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মানতে বাধ্য নয়। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। পরীক্ষা পাসের সার্টিফিকেটেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বা লোগো থাকবে না। বিভিন্ন সময়ে কলেজগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ ধরনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এবার তাঁরা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরাও বোধ করি এ সিদ্ধান্তে হাঁপ ছেড়েছেন। কারণ, ২০১৭ সালে যখন সাত কলেজ অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক তা মেনে নিতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত দায়িত্বের অতিরিক্ত তাঁদের সাত কলেজের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর জন্য প্রশ্ন তৈরি করা, প্রশ্ন ছাপানো ও ফলাফল তৈরি করার কাজ তাঁদের অনেক ক্ষেত্রে তিক্ত অভিজ্ঞতারও মুখোমুখি করেছে।


ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার মৌখিক সুপারিশে ঢাকার সাতটি কলেজকে অধিভুক্তির আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে কাজ শুরু করার আগে যতটুকু প্রস্তুতির দরকার ছিল, ততটুকু প্রস্তুতি না নিয়েই তড়িঘড়ি করে অধিভুক্ত-পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করে দেওয়া হয়। লোকবলের অভাব, পদ্ধতিগত পার্থক্য, কলেজগুলোর সঙ্গে সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সাত কলেজের পরীক্ষা নিতে প্রথম দিকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনও করেছেন। এসব আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থীকে চোখও হারাতে হয়েছে।


অধিভুক্তির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের সঙ্গে মিলিয়ে সাত কলেজের উপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরি করেছে। পরীক্ষা কমিটিগুলোতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যৌথভাবে কাজ করে থাকেন। প্রশ্নপত্র তৈরি, প্রশ্ন সমন্বয়, খাতা দেখা, মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে কলেজের শিক্ষকেরাও অংশ নেন। এসব কাজের পারিতোষিক বাবদ যে টাকা পাওয়া যায়, তার হার সবার জন্যই এক। তবে বিভিন্ন সময়ে কলেজের শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা আগের চেয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা অভিযোগ করেন, পরীক্ষার কাজের পারিতোষিক বাবদ প্রাপ্ত চেক তুলতেও তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হয়।



অধিভুক্তি বাতিলের পর সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহু দিনের দাবি পূরণ হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশও একই রকম দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁরাও দীর্ঘদিন ধরে অধিভুক্তির বিপরীতে কথা বলেছেন। এখন সাত কলেজ একত্র হয়ে নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত হবে কি না কিংবা আগের পদ্ধতি অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে, সেটি একান্তই কলেজগুলো ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে হঠাৎ নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত হঠকারী হতে পারে, এ কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।


২০২৪ সালের এপ্রিলে আরও ৯টি সরকারি কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এভাবে ধীরে ধীরে দেশের সব কলেজকে নিকটবর্তী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একীভূত করে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। পরিকল্পনা ছিল এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও বিলুপ্ত করার। কিন্তু সাত কলেজের অধিভুক্তির পর নানা সংকট প্রত্যক্ষ করে নতুন কোনো কলেজকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। এখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফিরে যেতেও রাজি নন।
তবে কলেজগুলোকে নিয়ে একক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজটি সহজ নয়। বিশেষত এসব কলেজে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীও রয়েছে। এ ছাড়া কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানানো মানে এই নয় কেবল সাইনবোর্ডের বদল ঘটানো। সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কোনো কলেজের শিক্ষার্থীরা এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতেও আন্দোলন করেছেন। তবে এই আন্দোলনে সেসব কলেজের শিক্ষকদের সমর্থন থাকেনি। কেননা শিক্ষকেরা মনে করেন, কোনো কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হলে তাঁদের রাজধানীর কলেজ ছেড়ে জেলা শহরে কিংবা দেশের যেকোনো প্রান্তের কলেজে বদলি হয়ে চলে যেতে হতে পারে।


মূল চিন্তার জায়গা অবশ্য অন্যখানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান যথেষ্ট পরিমাণে তলানির দিকে। দেশে যেমন একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে, তেমনি একের পর এক কলেজে স্নাতক (সম্মান) চালু করা হয়েছে। শিক্ষার মান বাড়ানোর দিকে কখনোই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী আছে। এই সংখ্যা দেশের উচ্চশিক্ষার মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২ শতাংশ। এসব কলেজে ঠিকমতো ক্লাস হয় না, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো ক্লাসে আসেন না। গতানুগতিক প্রশ্নের ধারার কারণে কেবল বাজারের গাইডবই পড়েই পরীক্ষায় উতরে যাওয়া যায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও