প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কার যেভাবে হতে পারে

প্রথম আলো সৈয়দ আব্দুল হামিদ প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:০৪

প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার তিনটি অংশ রয়েছে—প্রমোটিভ, প্রিভেন্টিভ ও কিউরেটিভ। এর মধ্যে প্রথম দুটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রমোটিভ ও প্রিভেন্টিভ সেবা শক্তিশালী, সেই স্বাস্থ্যব্যবস্থাই বেশি কার্যকর। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার তিনটি ধারা চালু আছে—ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক সহায়তা ট্রাস্টের অধীন কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন হেলথ সাব সেন্টার।


মাঠপর্যায়ে এই তিন ধরনের সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার বিভাগের মাধ্যমে। উল্লেখ্য, পরিবার পরিকল্পনাসেবা এবং মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যসেবার একটি অংশ পরিচালিত হয় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার বিভাগের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে। ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত, যা কোনো ভালো স্বাস্থ্যব্যবস্থার লক্ষণ নয়!


এত সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে দ্বৈত ব্যবস্থা, জনবলের অভাব, উপযুক্ত তদারকির অভাবসহ নানা সীমাবদ্ধতা। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ শহরে বসবাস করলেও শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার তেমন কোনো কাঠামো নেই। হাতে গোনা কয়েকটি ‘গভর্নমেন্ট আউটডোর ডিসপেনসারি’র মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের যৎসামান্য ব্যবস্থা আছে।


‘সিটি করপোরেশন অ্যাক্ট-২০০৯’ ও ‘মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্ট-২০০৯’ অনুযায়ী শহরাঞ্চলে প্রাথমিক সেবার দায়িত্ব বর্তায় সিটি করপোরেশন ও মিউনিসিপ্যালিটির ওপর। কিন্তু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নেই; সদিচ্ছারও অভাব রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সাল থেকে ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট’ নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন এবং কিছু মিউনিসিপ্যালিটিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।



এ প্রকল্পের একদিকে যেমন স্থায়িত্ব নেই, অন্যদিকে এর কার্যক্রম শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে টিকাদানসহ স্বাস্থ্যের বেশ কিছু সূচকে শহরাঞ্চল গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব স্বাস্থ্যের সামগ্রিক সূচকে পড়ছে, যার দায়ভার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপরেই বর্তায়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকরভাবে করতে না পারার দায়ভার যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই নিতে হয়, করোনাকালই তার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও কথাটি অনুরূপভাবে প্রযোজ্য।


তাই সংগত কারণেই গ্রাম ও শহর উভয় অঞ্চলেরই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে ‘সিটি করপোরেশন অ্যাক্ট-২০০৯’ ও ‘মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্ট-২০০৯’-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা প্রয়োজন। ‘স্বাস্থ্য’ যেহেতু প্রমোটিভ, প্রিভেন্টিভ, কিউরেটিভ, রিহ্যাবিলিটেটিভ ও প্যালিয়াটিভ সেবাসংবলিত একটি ব্যাপক বিষয়, তাই জনগণকে সঠিকভাবে এসব স্বাস্থ্যসেবা (বিশেষ করে প্রমোটিভ ও প্রিভেন্টিভ সেবা) পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে।


এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গ্রাম ও শহর অঞ্চলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।


গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে দুই ধরনের উপায় চিন্তা করা যায়। একটি হলো শ্রীলঙ্কার মতো মাঠপর্যায়ে পাবলিক হেলথ সেবা ও ক্লিনিক্যাল সেবা আলাদাভাবে প্রদান করা। পাবলিক হেলথের মধ্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা, শিশু টিকাদানকারী কর্মসূচি, বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা, পুষ্টিসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাসহ সব ধরনের প্রমোটিভ ও প্রিভেন্টিভ কেয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মাঠপর্যায়ে ইউনিয়ন ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টারকে উপযুক্ত জনবল সমন্বয়ে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে এসব সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে।


উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যমান জনবলের (যেমন ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিট্যান্ট, ফ্যামিলি প্ল্যানিং ইন্সপেক্টর, ফ্যামিলি প্ল্যানিং ভিজিটর, হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট হেলথ ইন্সপেক্টর ও হেলথ ইন্সপেক্টর) দায়িত্ব পুনর্নিরূপণ করা যেতে পারে। তবে অধিক কার্যকরভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে বর্তমান ওয়ার্ডভিত্তিক ‘ক্যাচমেন্ট’ এলাকার পরিবর্তে জনসংখ্যাভিত্তিক ‘ক্যাচমেন্ট’ এলাকা নির্ধারণ করতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও