অর্থনীতির শৃঙ্খলা : সঞ্চার যখন জরুরি

যুগান্তর হাসান মামুন প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৩

কী পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছিল, তা কারও অজানা নয়। তবে এ পরিস্থিতিতে ভিন্ন পদক্ষেপও নেওয়া যেত। অর্থবছরের মধ্যভাগে এসে ওই পদক্ষেপ নেওয়ায় জনসাধারণ, ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কিছু পণ্য ও সেবায় বর্ধিত কর প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে আসে বর্ধিত কর হ্রাসের পদক্ষেপ। এমন সংবেদনশীলতা দেখানোয় সরকারের প্রশংসাই হচ্ছে। তবে অনেকেই ভেবে আশ্চর্য হচ্ছেন, সরকার বিশেষ করে চলমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে কোন্ বিবেচনায় এত পণ্য ও সেবায় কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নিল! সার্বিক ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুটোই এখন ‘ডাবল ডিজিটে’। এটা আবার কমবেশি দুবছর ধরে উচ্চপর্যায়ে থেকে দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে জনসাধারণের। মূল্যস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে থাকলে শিল্পপণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় এক্ষেত্রেও সংকোচন ঘটে। তাই এটা সাধারণভাবে ব্যবসায়ীদেরও অপছন্দ। হালে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপে ব্যবসায়ীরাও তীব্র আপত্তি জানান এজন্য যে, এতে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা তো রীতিমতো আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এ খাতে ভ্যাট তিনগুণ করায়। দীর্ঘ করোনাকালে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এর পুনরুদ্ধারের সময় বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও তাদের এক বিরূপ পরিস্থিতিতে আটকে রেখেছে। এমন উদাহরণ আরও দেওয়া যাবে।


এ অবস্থায় কেবল রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টায় ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। প্রতিক্রিয়া দেখে পরে কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বদলালেও তাই এ প্রশ্নটি থেকে যাবে, ঠিক কোন্ বিবেচনায় বা কাদের উৎসাহে এমন পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার? অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যেত। অর্থবছরের মধ্যভাগে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবায় এভাবে কর বাড়ানোর পদক্ষেপ অবশ্য অদৃষ্টপূর্ব। এটাও ঠিক, এখনকার মতো পরিস্থিতি আর কখনো কোনো সরকারকে মোকাবিলা করতে হয়নি। দেশে একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে এবং নতুন ধরনের সরকার নিয়েছে দায়িত্ব। হাসিনা সরকার চরম স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে অর্থনীতিকেও দুর্দশায় নিক্ষেপ করে বিদায় নিয়েছে। এতে প্রথমত শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে তার পর আনতে হবে গতি। কিন্তু অর্থবছরের মধ্যভাগে এসে যেভাবে কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজটি জটিল হয়ে পড়বে বলেই মনে হচ্ছে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা এ অবস্থায় হবে আরও কঠিন। সেজন্য শুধু গুটিকয় পণ্য ও সেবায় নয়; যথাসম্ভব অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভ্যাট-শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনা করতে হবে।



মাঠে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, সরকারের বরং উচিত ছিল পরিচালন ব্যয় কমিয়ে এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয় না করে কর-রাজস্ব বাড়ানোর এমন পদক্ষেপে না যাওয়া। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা সংগঠনটিও শতাধিক পণ্য ও সেবায় কর বাড়ানোর পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। তারা যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতেও রয়েছে বিএনপির সঙ্গে সঙ্গতি। আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির শর্ত তথা কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর বিষয়টিও এ অবস্থায় এসেছে আলোচনায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর-রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় সরকার নিজেও যে কর বাড়াতে চায়, সেটা অনস্বীকার্য। আর বুঝিয়ে বললে আইএমএফ যে বাংলাদেশের বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারবে না, সেটা মনে করার কারণ নেই। বিগত সরকারের আমলে একাধিকবার সংস্থাটির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলেও তারা প্রতিশ্রুত ঋণ প্রদান থেকে সরে আসেনি। আইএমএফের মতো সংস্থা এদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কেও গভীরভাবে অবগত। বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা, বিশেষত এর ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও তাদের জানা। এ অবস্থায় এ চিত্রটিও সামনে এসেছে-সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতায় কী পরিমাণ অর্থ জোগাতে হবে। বাড়তি কর ঠিকমতো আহরণ হলে যে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বর্ধিত আয় হাতে আসবে, তার অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় হবে ওই মহার্ঘ ভাতা জোগাতে। এমন খবর বাজারে আসার পর শতাধিক পণ্য ও সেবায় কর বাড়ানোর পদক্ষেপে আরও বেশি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।


প্রশ্ন উঠেছে, বেসরকারি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের ‘মহার্ঘ ভাতা’ জোগাবে কে? এ খাতে তো বরং বিরাজ করছে অস্থিরতা। বিদেশি বিনিয়োগ দূরের কথা; বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশি বিনিয়োগও বাড়ছে না। নতুন কলকারখানা প্রতিষ্ঠার খবর নেই বললেই চলে। বিদ্যমান সক্ষমতা ব্যবহার করেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় বরং চলছে শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই। এতে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে থেকে থেকে। এর ওপর প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ এসে যুক্ত হচ্ছে শ্রমবাজারে। তাদের একাংশ বিদেশে কাজের সন্ধানে গেলেও সিংহভাগ থেকে যাচ্ছে দেশে, বেকার অবস্থায়। বিগত সরকার-ঘনিষ্ঠদের প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি সংকটে পড়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও হাজার হাজার মানুষ কাজ হারাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখে দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে বক্তব্য দেওয়া হলেও কাজটি তো কঠিন। ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিকের যে দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছিল, তার তৎপরতায় ব্যাংক খাতেও বিরাজ করছে অস্থিরতা। একশ্রেণির ব্যাংককে বিশেষ সহায়তায় টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে সরকারকে। নইলে আমানতকারীরাই শুধু বিপদে পড়বেন না; এসব ব্যাংকের কর্মচারীরাও কাজ হারাবেন। গোটা ব্যাংক খাতেও পড়বে এর প্রভাব। একবার আস্থায় ধস নামলে তাতে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করাও কঠিন হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও