হুঙ্কার দিয়ে ক্ষমতায় ট্রাম্প

বিডি নিউজ ২৪ আহসান কবির প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৩৯

যে নিজের চুল সামলাতে পারে না সে পৃথিবী সামলাবে কেমন করে?— ট্রাম্প বিরোধীদের সমালোচনা।


এক পর্নো তারকার মুখ বন্ধ করতে ডনাল্ড ট্রাম্প ঘুষ দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীকালে আলোচিত এক মামলার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে একজন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ানের একটি মন্তব্য বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। মন্তব্যটি ছিল এমন— ট্রাম্প যতই উপরে উঠুন না কেন তার নজর আসলে নিচের দিকে। গ্রিনল্যান্ড দখলে নেবার খায়েশ জানাবার পর অনেকেই এখন এই কথাটা পুনর্ব্যক্ত করছেন। কারণ গ্রিনল্যান্ডের সব সম্পদ নাকি এর মাটির তলায়!


সে যাই হোক, প্রায় তিন যুগ আগে বিটিভির এক ধারাবাহিক নাটকের শুরুতে লেখা উঠত— ‘অখণ্ড জমির পৃথিবী’। বিভাজন আর ভাগাভাগির জন্য খণ্ডিত হয় জমি, এমনকি মানুষের ভালোবাসাও। জমি বা মাটির চেয়ে তাই আকাশই ভালো। পাখিরা যে কারণে ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়া এক দেশের আকাশ থেকে অন্য দেশের আকাশে উড়ে যেতে পারে। সাইবেরিয়া থেকে বহু পথ পাড়ি দিয়ে পাখিরা তাই নির্বিঘ্নে চলে আসতে পারে বাংলাদেশে। পাখিদের দুর্বলতা তারা ডানায় বেঁধে মানুষকে তার স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু ভিসাহীন পৃথিবীর ধারণাটা তাহলে কেমন?


এখনও কল্পনায়, কাগজ-কলমে কিংবা লেখালেখির মধ্যে বেঁচে আছে ভিসাহীন পৃথিবীর ধারণা। লক্ষ বছর আগেও খাবার সংগ্রহ কিংবা শিকারের জন্য মানুষের মধ্যে মারামারি সংঘর্ষ হতো। বিবিধ কারণে একস্থান ছেড়ে কোনো এক গোত্রের অন্যস্থানে চলে যাওয়াটা রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল। তখন হয়তো নিয়মনীতি বা ভিসা পদ্ধতি ছিল না। এখনও অবশ্য একবিশ্ব একদেশ বা ভিসাহীন পৃথিবী করা যায়। প্রশ্ন উঠতে পারে এটা কীভাবে সম্ভব? মজার ব্যাপার হচ্ছে এই পদ্ধতি একেবারেই পুরোনো নয়।


রাজা-বাদশাহদের যুগ শেষ হবার বহুদিন পর আজ থেকে সত্তর-আশি বছর আগে জার্মানির হিটলার এটা করতে চেয়েছিলেন। অস্ত্র ও সেনাবলে বলীয়ান হিটলার পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়াসহ কয়েকটা দেশ দখল করেছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণ করেছিলেন। শেষরক্ষা হয়নি, পৃথিবীর সব দেশ দখল করার ইচ্ছা ভুলে আত্মহত্যা করে পৃথিবী ছেড়েছিলেন হিটলার। হিটলারের মতো সেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড জে. ট্রাম্প। ট্রাম্পকে কেউ কেউ ট্রাম্পিটলার বলতে শুরু করেছেন, ট্রাম্প ও হিটলারের সন্ধি বিচ্ছেদের পর দাঁড়ায় এই শব্দটি।



২০১৯ সালের পুরোনো খায়েশ ট্রাম্পের মনে জেগে উঠেছে আবার। সুমেরু অঞ্চলের গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে বসবার আগেই। ২০১৯-এ অবশ্য গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে অর্থনৈতিক অবরোধ কিংবা সামরিক বল প্রয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ খ্যাত গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। ডেনমার্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এমন খায়েশে নাখোশ, প্রতিবাদে তারা বলছেন— গ্রিনল্যান্ডের অখণ্ডতা বজায় রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্যও নয়। খায়েশ পূরণ করতে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড তথা ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে পারেন কিংবা অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে দিতে পারেন। শতকরা আশি ভাগ বরফের নিচে থাকা গ্রিনল্যান্ডের ৫৬ হাজার নাগরিক স্বাধীনতাও চাইতে পারেন।


গ্রিনল্যান্ডের মতো পানামা খালের দখল নিয়েও অনেক কথা বলেছেন ট্রাম্প। জিমি কার্টারের আমলে মীমাংসিত পানামা খাল যার নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে সেটা নাকি এখন নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের দরকার। যদিও পানামা তীব্রভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ট্রাম্পের এই স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না! চুক্তিগতভাবে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে নির্বোধ বলেছেন মহামতি ট্রাম্প।


গ্রিনল্যান্ড বা পানামার মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো ও কানাডা নিয়েও কথা বলেছেন ট্রাম্প। সন্ত্রাস, মাদক পাচার ও অভিবাসীদের কারণে মেক্সিকো নামের দেশটার নাকি আলাদা থাকার দরকার ছিল না। ট্রাম্প মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর রাখার প্রস্তাবও দিয়েছেন! শত বছর ধরে মেক্সিকো যে আলাদা দেশ সেটা ওই দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শিনবাউম পারদো মহামতি ট্রাম্পকে জানিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় ক্লদিয়া খোঁচা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো উত্তর আমেরিকা মহাদেশের নাম ‘মেক্সিকান আমেরিকা’ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। মেক্সিকোর সীমান্ত মুছে ফেলার মতো কানাডাকেও যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বানানোর খায়েশ ব্যক্ত করেছেন ট্রাম্প! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যকার সীমান্তকে কৃত্রিমভাবে আঁকা লাইন বলে অভিহিত করে ডনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, অর্থনীতির স্বার্থে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীভূত করা জরুরি।


তাহলে কী দাঁড়াল ব্যাপারটা? হিটলারের স্বপ্ন ভর করেছে ট্রাম্পের মাথায়? জোর করে বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি একদেশ-একবিশ্ব বানানোর চেষ্টা করবে? কী বলা হবে তখন? বহুজাতিক একদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সবদেশ? এসব না ভেবে পুনরায় শপথ নেবার আগে আমরা ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ভাবি। তার জন্য শুভকামনা ও হাসিমাখা কিছু প্রশ্ন তুলে রাখি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও