প্রকল্পনির্ভর উন্নয়ন ও ঘুষ বাস্তবতা

বিডি নিউজ ২৪ খান মো. রবিউল আলম প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:২৬

বাংলাদেশ একটি প্রকল্পশাসিত দেশ। প্রকল্প মানে স্বপ্লমেয়াদী উন্নয়ন উদ্যোগ। উদ্যোগ না বলে তৎপরতা বলাই সমীচীন। কারণ, প্রকল্প নিষ্কলঙ্ক নয়। প্রকল্প হলো সুনির্দিষ্ট ক্ষত। বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকার দুদশকের অভিজ্ঞতায় দেখেছি প্রকল্প বরাদ্দের কমপক্ষে ১৫-২০ ভাগ অনিয়ম বা দুর্নীতিতে খরচ হয়। দুর্নীতিযুক্ত প্রকল্পগুলোর বার্নরেট ভালো মানে খরচের হার বা কর্মতৎপরতা অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় বেশি। কারণ, এখানে ফাইল ঘুরে বেশি। আর ফাইল ঘুরলে আসে নগদনারায়ণ। যেসব প্রকল্পে দুপয়সা বাড়তি আয়ের সুযোগ নেই সেগুলো স্থবির প্রকল্প।


প্রকল্প মানেই কাগজ-কালি, কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল, ফিকচার-ফার্নিচার আর মানবসম্পদের বড় কর্মকাণ্ড। প্রকল্প অফিস থাকে শহরে-মহানগরে। তিনবছর বা পাঁচবছর মেয়াদী তৎপরতা। অনেক সময় শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যায়। প্রকল্প সাধারণত পাঁচ বছরের মেয়াদী হয়। তবে এমন কিছু প্রকল্পও আছে যার তিনটি পর্ব থাকে এবং চলে ১০ থেকে ১৫ বছর অবধি। তবে সরকারি ৮০ শতাংশ প্রকল্পই হয় পাঁচ বছর মেয়াদী। প্রকৃতপক্ষে প্রকল্প হলো নির্দিষ্ট ফোকাসধর্মী স্বল্পমেয়াদী কাজ। প্রকল্পের ভেতর রয়েছে এক ধরনের তাৎক্ষণিকতা। কোনো চাহিদার তাৎক্ষণিক সমাধান। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কোনো সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান হয় না। সমস্যাটি যেন আবার তৈরি না হয় তার জন্য লেগে থাকতে হয়।


যেমন, দেশজুড়ে যে বিস্তৃত পাকাসড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে তা করা হয়েছে মূলত অনেকগুলো প্রকল্পের আওতায়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সড়ক পাকা করার পর তার মেয়াদ চার বছর হলে তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজস্ব খাতের আওতায় চলে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশে যে পরিমাণ সড়ক পাকা হয়েছে, সেই তুলনায় এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ অপ্রতুল। ধারণা করা হয়, তা চাহিদার তুলনায় তা মাত্র ১৫ ভাগ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেশব্যাপী পাকাসড়ক নেটওয়ার্কের পরিমাণ দেড় লাখ কিলোমিটারের ওপরে আর সড়ক ও জনপথের একুশ হাজার কিলোমিটারের ওপরে।



সুতরাং সড়ক নির্মাণ শেষ কথা নয়। নির্মিত সড়ক অবকাঠামো সব মৌসুমে চলাচলের উপযোগী রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পভিত্তিক স্বল্পমেয়াদী উন্নয়ন থেকে যদি টেকসই রিটার্ন পেতে চাই তাহলে সেগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে রিটার্ন আসবে না, অর্থনীতি রোল করবে না। আয় বাড়বে না। দেশ উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারাবে।


অন্যদিকে প্রকল্পে অধিকাংশ অবকাঠামো নির্মাণত্রুটি নিয়ে তৈরি হয়, কাজ হয় মানহীন। এ কারণে সড়ক অবকাঠামোর আয়ুষ্কাল কমে আসে। এ মানহীনতা কেবল পেশাদারি দক্ষতা, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বা গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তের সীমাবদ্ধতা নয়। এর পেছনে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শক্ত ভিত। প্রকল্প ঘিরে যত ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়, তার চূড়ান্ত প্রভাব পড়ে কাজের মানের ওপর। যেমন ধরুন প্রকল্পের পক্ষ থেকে যখন কাজের মান তদারকি করতে মাঠে যাওয়া হচ্ছে ঠিকাদার তখন তদারকি দলের সদস্যদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন, টিমকে উপহার দিচ্ছেন এবং তা করছেন নিজের স্বার্থে। নিশ্চয় এ টাকা তিনি পকেট থেকে খরচ করছেন না। কাজের কোনো না কোনো অংশ থেকে তিনি পুষিয়ে নেবেন। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি ও অনিয়ম স্বাভাবিক রূপ লাভ করেছে।


দুর্নীতির ব্যাপারে মানুষের সহনশীল মনোভঙ্গি সামাজিক বাস্তবতার এক নতুন দিক। কারণ, মানুষ দুর্নীতিকে নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু মনে রাখতে হবে নৈতিকতা দিয়ে সব সময় জীবন চলে না। যেখানে কোনো সিস্টেম গড়ে উঠেনি সেখান সৎ থাকা বা দুর্নীতিমুক্ত থাকা ব্যয়বহুল ব্যাপার। এটা জনগণসহ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কাঠামো ও ঠিকাদার সবাই বুঝে গেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও