ফিরিয়ে দিন শহীদ আনোয়ারা উদ্যান
নব্বইয়ের দশক থেকে দীর্ঘদিন ঢাকা শহরের মণিপুরিপাড়ায় ছিলাম। তখন সেখান থেকে রাস্তা পার হয়ে শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের ভেতর দিয়ে ইন্দিরা রোডের দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে যেতাম। দুটি প্রধান রাস্তার মাঝে একটি আয়তাকার ছোট পরিসরে গড়ে তোলা হয়েছিল সেই উদ্যান। উদ্যানে ছিল নাগেশ্বর, বকুল, চাঁপা, চামেলি, বেলি, অশ্বত্থ, কদম, পাকুড়, খইয়া বাবলা, মেহগনি, রঙ্গন, গন্ধরাজ, শিউলি, সোনালু, ছাতিম, ইউক্যালিপটাস, রয়্যাল পাম ইত্যাদি গাছ।
একদিন দেখলাম রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে, উদ্যানের গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কী হবে ওখানে? জানলাম মেট্রো স্টেশন হবে। কী আনন্দ! মণিপুরিপাড়া থেকে আর রাস্তার জ্যাম ঠেলে বাসে চেপে মতিঝিল যেতে হবে না। সে আনন্দ মাথায় করে মাঝে মাঝে মণিপুরিপাড়ার বাসার ছাদে উঠে মেট্রোরেল সড়কের কাজ দেখতাম আর স্বপ্ন বুনতাম। তত দিনে মেট্রোরেলের উড়াল সড়কের নিচে গাড়ি চলাচল আর সরঞ্জামাদিতে উদ্যানটি শেষ হয়ে গেছে। ওখানে মেট্রোরেলের অফিস, ভান্ডার ও শ্রমিকদের থাকার ঘর করা হয়েছে। ভেবেছিলাম মেট্রোরেল চালু হলে আবার হয়তো সেই শহীদ আনোয়ারা উদ্যানকে ফিরে পাব।
এখন সেখানে থাকি না। কিন্তু প্রায় রোজই মেট্রোরেলে চেপে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট যাই আর তাকিয়ে দেখি সে উদ্যানের উলঙ্গ রূপ। অফিসঘরগুলো সরে গেছে, পূর্ব দিকে এখনো কিছু গুদামঘর ও গাড়ি, বেড়া ইত্যাদি রয়ে গেছে। মাঝখানে ফাঁকা মাঠ পড়ে আছে। শোনা গেছে, শহীদ আনোয়ারা পার্কের জায়গায় পার্ক না করে প্লাজা তৈরি করা হবে। এর প্রতিবাদে পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ সমাবেশও করেছিলেন। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও তাতে নগর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। হলে মেট্রো স্টেশন পুরো চালু হওয়ার পরও সেখানে উদ্যান তৈরির কোনো আলামত দেখা যায়নি। জানি না সেই ধ্বংস করা উদ্যানটি আর কখনো ফিরে আসবে কি না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পরিবেশ রক্ষা