বন্দরনগরের এই দৈন্য আমাদের মনে আঘাত দেয়
বছরের শুরুতে সৌরভ ছড়ানো একটি সংবাদ চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের মনকে প্রফুল্ল করেছে। ১৩৬ প্রজাতির বিচিত্র বর্ণ ও গন্ধের বাহারি ফুল রং ছড়িয়েছে ডিসি পার্কের ফুল উৎসবে। পৌষের হিমশীতল শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন আগামী বসন্তের স্পর্শ দিয়ে যাচ্ছে যেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় বন্দর সংযোগ সড়ক ধরে এক কিলোমিটার গেলেই ফুলের উৎসবে গিয়ে প্রজাপতির মতো আপনার মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা হলেও ডিসি পার্কের অবস্থান চট্টগ্রাম শহরের প্রান্তেই বলা যায়। সে হিসেবে এই ফুল উৎসব যানজট, কোলাহল–কবলিত ধূলিধূসর চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দাদের জন্য একটু অন্য রকম বিনোদনে এবং বিশুদ্ধ বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ নিয়ে এসেছে।
ফুল উৎসব উপলক্ষে দুই বছর ধরে চেনা ডিসি পার্ক নতুন রূপ ধারণ করেছে। যশোর, রংপুর, ঢাকা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আনা লক্ষাধিক ফুলের গাছ দিয়ে স্বচ্ছ জলাশয় সমৃদ্ধ পার্কটিকে রূপকথার ফুলপরিদের রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে। বছরের অন্য সময়ে দেখা পার্কটি এখন অন্য রকম সৌন্দর্যে মানুষকে মোহিত করছে।
পার্কে ঢোকা মাত্রই ফুলের নরম পাপড়ি দিয়ে গড়া অতিকায় পাখির ভাস্কর্য, ফুল দিয়ে গড়া বিশাল বিশাল প্রজাপতি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। ১৯৪ একরের বিশাল পার্কটি ছেয়ে গেছে ফুলে ফুলে। ডিসি পার্কের প্রধান আকর্ষণ এর বড় বড় স্বচ্ছ দিঘিগুলো। দিঘি দুটির পাশে সাজিয়ে রাখা লাল, হলুদ, মেরুন, শুভ্র ফুলগুলোর প্রতিচ্ছবি উঠেছে জলাশয়ের পানিতে। দিঘির মাঝখানে বাঁশের ভেলা। সেখানেও প্রদর্শনীর ফুলগুলো হাসি ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে আনন্দিত করছে।
একটা সময় ছিল যখন ডিসি পার্কের এ বিরাট এলাকাটি ছিল নানা অসামাজিক কার্যকলাপসহ মাদকসেবীদের আখড়া। এখান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করত অসাধু ব্যবসায়ীরা। বলতে গেলে এটি ছিল অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। জেলা প্রশাসন এটিকে উদ্ধার করে দুই বছর আগে এখানে ডিসি পার্ক প্রতিষ্ঠা করে।
ফুল উৎসব ছাড়াও ডিসি পার্কের প্রকৃতি এমনিতেই মানুষকে টানে। ইট–পাথরের অলিগলিতে থেকে থেকে যানজট, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিসহ নানা দূষণে যাদের জীবন অতিষ্ঠ তারা সপ্তাহে অন্তত এক দিন বড় বড় দিঘির তীরে বসে মনটাকে সতেজ করে আসে। দিঘির তীরে সারি সারি খেজুরগাছ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরছে রস। সেগুলো দেখে ফেলে আসা গ্রামীণ জীবনের জন্য অতীতাকুল হয়ে পড়ে অনেকেই।
ডিসি পার্কে জমজমাট ফুল উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি সুখবর। বছরের শুরুতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জাতিসংঘ পার্কটি জুলাই স্মৃতি উদ্যান নামে নতুন করে চালু হয়েছে। ৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তবিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় অবস্থিত সংস্কার করা পার্কটি উদ্বোধন করেন। এটি এখন সবার জন্য উন্মুক্ত হলো।
১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় পার্কটি সংস্কার করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এটির নতুন নাম ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যান’। উদ্যানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন পার্কটিকে স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এখানে শৈশব কেটেছে। নান্দনিকভাবে সাজানো পার্কটির দায়িত্ব সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ও জেলা প্রশাসনকেই নিতে হবে। এই তিনের মধ্যে একসময় সমন্বয় ছিল না। এখন একসঙ্গে মিলে কাজ করছি।’ তিনি একসঙ্গে মিলে চট্টগ্রামকে সাজানোর আশা প্রকাশ করেন।