অগ্নিযুগের শেষ বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী

বিডি নিউজ ২৪ অজয় দাশগুপ্ত প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:০৩

এখন আর যাই থাক বা না থাক দ্রোহ বা বিপ্লব বলে কিছু নেই। শুধু বাংলাদেশে নয় দুনিয়া থেকেই এই প্রক্রিয়া বা মানুষের ত্যাগের ইতিহাস বিলুপ্তপ্রায়। আমাদের যৌবন পর্যন্ত আমরা জানতাম যাঁরা দেশ ও মানুষকে ভালোবেসে আত্মদান করেন তাঁরা অমর।


আমি চট্টগ্রাম শহরে জন্ম নিয়েছি। আমাদের এই গৌরবদীপ্ত শহরকে দুনিয়া তথা উপমহাদেশ চেনে বিপ্লবী সূর্য সেনের নামে। ব্রিটিশ ভারতে অকুতোভয় সূর্য সেন পরিচিত ছিলেন মাস্টার দা নামে । মাস্টার দাও তাঁর সুযোগ্য শিষ্য প্রীতিলতা ওয়েদ্দাদার, কল্পনা যোশীকে চেনে না এমন মানুষ বিরল। এই দলের বিপ্লব বা স্বাধীনতা স্পৃহা শেষতক সার্থক না হলেও তাঁদের প্রাণের বিনিময়েই একসময় ভারতবর্ষ ইংরেজ মুক্ত হবার পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল । এই বিপ্লবী দলের কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলেন বিনোদ বিহারী চৌধুরী।


বিনোদ বিহারী চৌধুরীর জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার উত্তর ভূর্ষি গ্রামে। ১৯২৯ সালে সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। লাভ করেন রায় বাহাদুর বৃত্তি। স্কুল জীবনেই বিপ্লবী যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এসময় তিনি সংস্পর্শে আসেন মাস্টারদা সূর্য সেনের এবং সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়ে মাস্টারদার বিপ্লবী বাহিনী ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে অনেক বীর বিপ্লবী শহীদ হন। বিনোদ বিহারীর কণ্ঠনালিতে গুলি লাগে। গোপনে তাঁকে চিকিৎসা নিতে হয়। ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ভারতের রাজপুতনা দেউলি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি অবস্থায় ১৯৩৪ সালে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৩৬ সালে ডিস্টিংশনসহ বি.এ পাস করেন। ইংরেজ সরকার কর্তৃক গৃহবন্দি অবস্থায় ১৯৩৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ ও বি.এল পাস করেন। সে বছর গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশায় যুক্ত হন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে শুরু করেন সক্রিয় রাজনীতি চর্চা। ১৯৪১ সালে আবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মুক্তি পান ৪৫-এর শেষ দিকে। বন্দি থাকাকালীন বিনোদ বিহারী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ৪৬-এ মুক্তি পেয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ– এই তিন পর্বে যত অন্যায়, অপশাসন ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটেছে সবটাতেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদে সোচ্চার, লড়াকু সৈনিক।



ছেলেবেলা থেকেই তাঁকে চিনতাম । কিন্তু তাঁর জীবন বা কর্মের গুরুত্ব বোঝার মতো মেধা ছিল না তখন । আমার সৌভাগ্য আমি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর অনুজের কাছে ইংরেজির পাঠ নিতাম। পান বাহার এলাচ ও মশলার সুগন্ধি মৌ মৌ বাড়িটি এখন আর নেই। তিনি তাঁর অনুজ কেউ নেই। কিন্তু স্মৃতিময় সে গলি ভরে আছে তাঁদের পদচারণার মুখরিত অতীতে । তখন না বুঝলেও পরে জেনেছিলাম তারুণ্যে স্বদেশপ্রেম আর পরাধীন দেশমাতাকে মুক্ত করার জন্য তিনি জীবন উৎসর্গে রাজি এক বিপ্লবী ছিলেন। যাঁর বেঁচে থাকারই কথা ছিলো না। অল্প বয়সে কালাপানিতে দেশান্তরিত এই মানুষটিকে সবসময় সাধারণ ধুতি-পাঞ্জাবি ছাড়া কিছুই পরতে দেখিনি। শারীরিক কাঠামোয় মিল ছিলো আমার সঙ্গে। ছিপছিপে মানুষ কিন্তু বুক ভরা সাহসও চেতনা। পরে বুঝতে পেরেছিলাম তাঁর সাহস আর দেশপ্রেম জন্ম নিয়েছিল যৌবনের শুরুতে । বলতে গেলে যৌবন শুরুর আগেই তিনি জেনে গিয়েছিলেন, ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান–ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!’ কেমন সাহসী ছিলেন একটু খুলে বলি ।


আওয়ামী লীগের নেতা চট্টগ্রামের প্রাক্তন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী একসময় বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে । এই জটিলতার কারণ অনেক । আমি বলব রাজনীতি এমনই। সে কাউকে ছাড় দেয় না । পাওয়ার গেইমে কত কিছু যে ঘটে তা জানা না থাকলে বোঝা মুশকিল । দুবার মেয়র হবার পর প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁকে কাবু করতে না পেরে ভিখারী বলে গালি দিয়েছিলেন। তাঁর অপরাধ ছিলো চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যবাহী একটি বালিকা বিদ্যালয়ে দোকানপাট বসানোর বিরোধিতা। কিন্তু তিনি তো দমার পাত্র ছিলেন না । তাঁর রক্তে ছিল বিপ্লবীর রক্তস্রোত । যিনি বৃটিশ শাসনে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছিলেন তিনি কেন ভয় পাবেন? তাঁকে অবজ্ঞা করে বা উপহাস করে ভিখারী আখ্যা দেয়ার পরিণতি ভালো হয়নি । যদিও আওয়ামী লীগ ঢাকা থেকে আসাদুজ্জামান নূর পাঠিয়ে সমঝোতা ও সম্মানের পথ তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু তারপরও মেয়রের শেষ রক্ষা হয়নি, সে যাত্রায় লাখো ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন চৌধুরী সাহেব। এমনই নেপথ্যের শক্তিধার মানুষটিকে বিয়ের পর থেকে দাদু বলে ডাকতাম। তিনি দীপাদের বাড়ির পাশের মানুষ এবং তাদের স্বজন।


গিয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। তখন তাঁর বয়স একশ। ঘরে ঢুকে প্রণাম করে জানতে চেয়েছিলাম, চিনতে পেরেছেন কি না। তাকিয়ে মুখ নামিয়ে নিলেন। জবাব দিলেন, তোমার কাকুর কাছে ঠিকানা চেয়েছিলাম সিডনিতে চিঠি লিখবো বলে। দেয়নি। দীপা প্রণাম করার পর বললাম, দাদু ওকে চিনতে পেরেছেন? এবারও সরাসরি কোন উত্তর দিলেন না। ওর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার বাবা কলকাতা যাবার আগে দেখা করার কথা। কিন্তু করেনি । এমনই প্রখর স্মৃতিশক্তি। কি টনটনে স্মৃতিধর। আমার মা তখন নার্সিং হোমে। গুরুতর অসুস্থ মায়ের কথা শুনে শূন্যে তাকিয়ে বলেছিলেন, যাবার মানুষকে যেতে দেয়াই ভালো। এর একসপ্তাহ পরে মা পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছিলেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও