কাজটা পুলিশেরই করার কথা, দুদকের প্রয়োজন হলো কেন?
‘বাংলাদেশ পুলিশ ঐতিহাসিক দাসত্বের শিকার’-কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এর চেয়ে ভালো বিশ্লেষণ আমি অন্তত খুঁজে পাইনি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে কম দুর্নীতিপরায়ণ চারটি দেশ; ডেনমার্কে ৮০ শতাংশ, ফিনল্যান্ডে ৯৫ শতাংশ, নিউজিল্যান্ডে ৬৭ শতাংশ এবং সুইডেনে ৭৩ শতাংশ মানুষ পুলিশের ওপর পুরোপুরি আস্থাশীল। পঞ্চম কম দুর্নীতিপরায়ণ দেশ, সিঙ্গাপুর। সেখানেও ৯৩ শতাংশ মানুষ তাদের পুলিশ বাহিনীর ওপর ভরসা রাখেন। সে তুলনায় সব দেশেই আমলা, রাজনীতিক, বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য শ্রেণির ওপর জনগণের আস্থা অনেক কম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কম দুর্নীতিপরায়ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচের দিকে। তাছাড়া পুলিশের ওপর এ দেশের জনগণের আস্থা বরাবরই তেমন একটা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকালে এবং পরবর্তী সময়ে সে আস্থার আরও বিপর্যয় ঘটেছে। তাই কম দুর্নীতিপরায়ণ দেশ এবং পুলিশের ওপর জনগণের বিশ্বাসের একটা সমীকরণ এতে খুঁজে পাওয়া যায়!
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষা অনুযায়ী আরেকটি তথ্য এই যে, উল্লিখিত কম দুর্নীতিপরায়ণ দেশগুলোর কোনোটিতেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। অবশ্য সিঙ্গাপুরে ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব দেশে পুলিশ বিভাগই দুর্নীতিবিষয়ক কাজের দেখভাল করে থাকে। অপরাপর অপরাধের মতো দুর্নীতিও একটি অপরাধ। তাই স্বাভাবিকভাবেই কেউ ঘুস বা অন্যায়ভাবে অর্জিত টাকা দিয়ে বাড়ি-গাড়ি করলে বা লুকিয়ে রাখলে বা পাচার করলে তার অনুসন্ধান পুলিশের কাজ। এর জন্য দুদকের কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ বাংলাদেশে এমন নয় কেন? কেন এ দেশের মানুষ পুলিশকে বিশ্বাস করতে চায় না? কেন বাংলাদেশে পৃথক দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রয়োজন হয়? আর জনগণের টাকায় পৃথক কমিশন করেও কেন দুর্নীতি কমে না?