ফুলকপির পিস কেন পাঁচ টাকা
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার আইরমারা গ্রামের কৃষক বশির আহমেদ গত বছর ১২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলেন। লাভও করেছেন। সেই লাভের আশায় এবার ফুলকপি আবাদ করেছিলেন আরও ৮ বিঘা জমি বাড়িয়ে মোট ২০ বিঘা জমিতে।
মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো পেলেও এখন খরচই উঠছে না। কারণ, বাজারে প্রতি পিস ফুলকপির দাম ঠেকেছে ৫ টাকায়। অথচ একটা ফুলকপি উৎপাদনে খরচই হয়েছে প্রায় ১৫ টাকা। তার মানে প্রতি পিস ফুলকপিতে লোকসান ১০ টাকা।
বশির আহমেদ আগামী বছর কি আর ফুলকপি আবাদ করবেন? হয়তো করবেন। হয়তো করবেন না। কিন্তু এবার যে ক্ষতি হলো, সেটি পোষাবেন কী করে? রাষ্ট্র কি তার পাশে দাঁড়াবে?
যে কৃষককে বলা হয় দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড; যে কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে ছোট্ট আয়তনের একটি দেশে প্রায় ২০ কোটি মানুষ খেয়েপরে বেঁচে আছে—তাঁদের জন্য রাষ্ট্র কতটুকু দায়বোধ করে? আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ কৃষককে কতটুকু মর্যাদা দেয়? তার দুঃখ-দুর্দশায় রাষ্ট্র কি আদৌ তার পাশে থাকে? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সুখকর হবে না। ফলে আপাতত ফুলকপিতেই দৃষ্টি দেওয়া যাক।
মানিকগঞ্জের কৃষক বশিরউদ্দিন দিন কয়েক আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে যে কথাগুলো বলেছেন, সেটি সারা দেশের কৃষকেরই প্রতিনিধিত্ব করে। গণমাধ্যমের খবর বলছে, সারা দেশেই ফুলকপির দাম ভয়াবহ আকারে পড়ে গেছে।
এখানে কয়েকটি প্রশ্ন:
১. মৌসুমের শুরুতে যে ফুলকপির পিস ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মাস দেড়েকের মধ্যে তার দাম কী করে ৫-১০ টাকায় নেমে এল? এটি কি বাজারব্যবস্থার ত্রুটি নয়?
২. মাঠপর্যায়ে একজন কৃষক একটি ফুলকপিতে ৫ টাকার বেশি পাচ্ছেন না। অথচ খুচরা বাজারে গিয়ে সেটি ২০ থেকে ২৫ টাকা হয়ে যাচ্ছে কী করে? মাঠ থেকে ভোক্তাপর্যায়ে আসতে কতবার হাতবদল হয় এবং প্রতিবার হাতবদলে কী পরিমাণ দাম বাড়ে?
৩. কৃষক ও ভোক্তাপর্যায়ে দামের এই যে বিরাট পার্থক্য, সেটি কমিয়ে আনতে রাষ্ট্রের মেকানিজম কী বা আদৌ কোনো মেকানিজম আছে কি না?
৪. ভরা মৌসুমে যখন ফুলকপি বা অন্যান্য সবজির দাম অনেক কমে যায়, তখন সারা বছরের জন্য ওই সবজি সংরক্ষণের মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কেন গড়ে তোলা যাচ্ছে না—যাতে করে সারা বছরই ভোক্তারা একটা যৌক্তিক দামে সবজি কিনতে পারে এবং সেই সঙ্গে কৃষককেও লোকসান গুনতে না হয়?
৫. বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে এ রকম সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা যাচ্ছে না কেন?
- ট্যাগ:
- মতামত
- উৎপাদন খরচ
- ফুলকপি