পরিবেশে ই-বর্জ্যের প্রভাব ও ব্যবস্থাপনায় করণীয়

বণিক বার্তা মো. ইকবাল সরোয়ার প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৮

ইলেকট্রনিক (ই-বর্জ্য) বর্জ্য বলতে বোঝায় পরিত্যক্ত বা উপযোগিতাহীন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। এ বর্জ্যগুলো মূলত মানুষের বাসাবাড়িতে দৈনন্দিন ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন: টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল, ওভেন, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, চার্জার, বাল্ব, ব্যাটারি ইত্যাদি। বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে এ ধরনের বর্জ্যের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও অব্যবস্থাপনার জন্য মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।


ই-বর্জ্যের মধ্যে সাধারণত থাকে লোহা, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, রৌপ্য, তামা, সিসা, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি। এসব লৌহজাত, অলৌহজাত ও বিষাক্ত পদার্থের বাণিজ্যিক মূল্যের পাশাপাশি রয়েছে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন উপাদান। তিনটি উৎস থেকে বাংলাদেশে ই-বর্জ্য মূলত উৎপন্ন হয়। যেমন এক. প্রাথমিক ব্যবহার ও মেয়াদোত্তীর্ণ-পরবর্তী পণ্য। দুই. প্রবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আনা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং তিন. উন্নত দেশগুলো থেকে অবৈধভাবে আনা পুরনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি।


ই-বর্জ্যে সিসা, পারদ, ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটাডেন্টের মতো বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির কারণে এটি পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত। এর অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা, যত্রতত্র পোড়ানো ও ভূমি ভরাটের মাধ্যমে মাটি, পানি ও বায়ুকে দূষিত করে। পরবর্তী সময়ে এ দূষণ বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে মানবস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বিশ্বেই ক্রমাগত এর পরিমাণ ও ধরন বাড়ছে।



মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদা পূরণে বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য। এছাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বাজারে রয়েছে বিভিন্ন নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং সচেতনতার অভাবে এসব পণ্য ও কোম্পানির চাহিদা বেড়েই চলেছে। ফলে অল্প কিছুদিন ব্যবহারের পরই অনুপযোগী ইলেকট্রনিক ডিভাইস রূপান্তরিত হচ্ছে ই-বর্জ্যে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।


বৈশ্বিক ই-ওয়েস্ট মনিটর ২০২৪-এর হিসাবে, ২০২৩ সালে সমগ্র বিশ্বে ৬২ মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে, যা পরিবহন করতে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ ট্রাকের প্রয়োজন পড়ে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ টন পরিমাণ মেমোরি কার্ড ও মাদারবোর্ড থেকে প্রায় ৬০০ গ্রাম স্বর্ণ, সাড়ে সাত কেজি রুপা, ১৩৬ কেজি তামা ও ২৪ কেজি টিন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। আবাসিক ও বিভিন্ন অফিসে ব্যবহৃত কম্পিউটার হার্ডডিস্কের অন্যতম একটি উপাদান হলো অ্যালুমিনিয়াম ও স্টেইনলেস স্টিল, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক হতে পারে এ দুটি উপাদানের ভালো একটি উৎস। অন্যদিকে জিংকের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হতে পারে ড্রাইলেস পরিত্যক্ত ব্যাটারি। এ উৎস থেকে ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ জিংক পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ও ল্যাপটপের লিথিয়াম আয়ন ব্যবহার হয় বলে এ উৎস থেকে লিথিয়াম সল্ট প্রস্তুত করা সম্ভব।


২০৩০ সালের মধ্যে ই-বর্জ্য খাতে বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়। ২০১০ সালের আগের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ই-বর্জ্য উৎপাদিত হয় জাহাজভাঙা শিল্প থেকে। যেসব পুরনো জাহাজ ভাঙার জন্য আনা হয় সেখানে মূলত সেসব দেশের ই-পণ্য বা ইলেকট্রনিক বর্জ্য বিদ্যমান থাকে। জাহাজ ভাঙার সময় এবং তৎপরবর্তী এসব বিষাক্ত ই-বর্জ্য মাটিতে ও পানিতে মিশে চক্রাকারে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এইচএসবিসি বৈশ্বিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে, যার বৃহৎ একটি অংশ হবে ইলেকট্রিক পণ্য। বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ফোনের গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি, সে হিসাবে প্রতিবছর কয়েক কোটি মোবাইল ডিভাইস যুক্ত হচ্ছে ই-বর্জ্যের ভাগাড়ে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বুয়েট কর্তৃক পরিচালিত ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ই-বর্জ্যের আনুমানিক পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার টন ও ৪ লাখ টন এবং প্রতি বছর ই-বর্জ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ২০ শতাংশ, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে পৌঁছাতে পারে ৪৬ লাখ টনে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও