বাংলাদেশ কি পাকিস্তানের ‘বিচরা হুয়া’ ভাই?

বিডি নিউজ ২৪ সালেহ উদ্দিন আহমদ প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:০৮

‘বিচরা হুয়া’ ভাইয়ের অর্থ কি? হারানো ভাই, বড় ভাই, ছোট ভাই, খুঁজে পাওয়া ভাই– যাই হোক না কেন; বাংলাদেশ কেন পাকিস্তানের ভাই হতে যাবে?


গত ২ জানুয়ারি ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার বলেছেন কথাটা। ইসহাকের ভাষ্য, “বাংলাদেশ আমাদের হারিয়ে যাওয়া ('বিচরা হুয়া’) ভাই। বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব উপায়ে সহযোগিতা করবে পাকিস্তান।”


খবরটা চোখে না পড়লেই ভালো হতো। এটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাগে ক্ষোভে শরীরটা জ্বলে উঠল। যারা একাত্তর দেখেছেন বা একাত্তরের কথা শুনেছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া কি আমার মতো বা আমার চেয়ে বেশি হয়নি? কলমটা হাতে নিতে হলো যদি ক্ষোভটাকে ভাষা দেওয়া যায়, যদি ভাষা খুঁজে পাওয়া যায়। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে অত্যাচারিত হয়ে ১৯৭১ সালে আমাদের কত মা-বোন ট্রমায়-রাগে-ক্ষোভে-লজ্জায়-অপমানে বোবা হয়ে গিয়েছিলেন, হারিয়ে ফেলেছিলেন তাদের কথা বলার সামর্থ্য! ওই অত্যাচারীদের নিয়ে বলতে গিয়ে, লেখার মতো ভাষা খুঁজে পাওয়া সহজ নয়!


আজ যদি আমরা চুপ হয়ে থাকি, আমাদের ওই নির্যাতিত মা-বোনেরা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন না। ১৯৭১ সালে গুলির নির্মম করতালিতে আমাদের দেশের যে লাখ লাখ মানুষের পিঞ্জর দুমড়িয়ে হৃদপিণ্ডটা টুকরো টুকরো হয়ে বের হয়ে গিয়েছিল, তারাও আমাদেরকে ক্ষমা করবেন না।


এই কথাগুলো আবেগ নিংড়ে বুক থেকে বের হয়েছে মোহাম্মদ ইসহাক দারের বক্তব্যের কারণে।বারবার মনে প্রশ্ন জেগেছে বাংলাদেশ কেন পাকিস্তানের ভাই হতে যাবে? ইসহাক দার বলতে পারতেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের গোয়াল থেকে ছুটে যাওয়া হারানো গাভী’, তাহলে হয়তো কিছুটা বুঝতে পারতাম আমরা। সত্যি, একাত্তরের আগে বাংলাদেশ ছিল ওদের গোয়াল ঘরে রশি দিয়ে বাঁধা। তারা প্রতিদিন দুধটা নিয়ে যেত, মাখন ও ঘি বানিয়ে খেত— রশিতে বাঁধা গাভীটা গোয়াল ঘরে শুয়ে শুকনো ঘাস চিবাত। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার হয়তো ওই গাভীটাকে খুঁজে পেয়েছেন, এখন শুধু চেষ্টা হবে যদি রশি দিয়ে বাঁধা যায় আবার।



বাংলাদেশকে গোয়াল ঘরে বেঁধে অর্থনৈতিক বঞ্চনার পাকিস্তানি চক্রান্তগুলো এখনো অনেকের স্মৃতিতে ভাস্বর। অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার অনেক লেখায় পরিসংখ্যান দিয়ে এগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন পাকিস্তান আমলেই। তিনি ‘ফোরাম’ নামে একটা সাপ্তাহিক সাময়িকী বের করতেন ষাটের দশকের শেষের দিকে, সেখানে থাকত এই বৈষম্যের বিস্তারিত বিবরণ। ২০২২ সালে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেহমান সোবহান স্মৃতিচারণ করেছেন, “অধ্যাপক কবীর চৌধুরী সে সময়ে ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন বা বিএনআরের কাজ করতেন। ১৯৫৯ সালের কোনো এক সময় তিনি আমাকে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি সম্পর্কে বিএনআরের প্রকাশিতব্য জার্নালে একটা অধ্যায় লিখতে বললেন। প্রকাশনাটির উদ্দেশ্য ছিল সম্ভবত রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনব্যবস্থার কৃতিত্ব প্রচার করা। লেখাটির জন্য গবেষণা করতে গিয়ে আমি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের বেশ কিছু প্রমাণ পেয়ে গেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের নুরুল ইসলাম অথবা অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনার সুবাদে এ সম্পর্কে আগেও কিছু ধারণা আমার ছিল। বিএনআরের প্রকাশনায় আমার লেখাটিও অন্তর্ভুক্ত হলো। লেখাটিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য বিশদভাবে তুলে ধরেছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সরকার বিষয়টি একদমই পছন্দ করেনি। তাদের হুকুমে আমার লেখা প্রত্যাহার করে অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফারুকের লেখা একটি ইতিবাচক নিবন্ধসহ জার্নালটি আবার নতুন করে ছাপা হয়।”


যখন এদেশের জনগণ পাকিস্তানের গোয়ালঘর থেকে রশি কেটে বের হওয়ার জন্য বিদ্রোহ করল, তখন শুরু হলো তাদের গাত্রদাহ। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় লক্ষ লক্ষ প্রাণ নিয়েছে পাকিস্তানের জল্লাদ বাহিনী, পুড়িয়ে দিয়েছে হাজার হাজার গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্ষণ করেছে এদেশের মা-বোনকে এবং তাদের আল-শামস ও আল-বদর বাহিনী দিয়ে হত্যা করেছে এদেশের শীর্ষ সন্তানদেরকে। আমরা এখন তাদের ‘বিচরা হুয়া ভাই’ হতে যাব কেন?


আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার পর আমাদের যে কয়টি সরকার এসেছে তারা সবাই নিজেদের ক্ষমতার জন্য স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যে যার মতো করে লিখেছে নিজেদের অবদানকে আলোকিত করতে। সত্যিকার ইতিহাস কখনো লেখা হয়নি। তাই তাদের লেখা ইতিহাস কেউ খুলে দেখেনি। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এখনো অন্ধকারে, হয়তো জানে না এই অন্যায় ও অত্যাচারের বিভীষিকা, হত্যা ও নির্যাতনের নিষ্ঠুরতা এবং ধর্ম ও বিবেক বর্জিত ধর্ষণের ইতিহাস। এই সুযোগে, পাকিস্তানিরা এখন বলে, আমরা তাদের ‘বিচরা হুয়া ভাই’।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও