বৈষম্যবাদী তৎপরতা যেভাবে পরাজিত করতে হবে

প্রথম আলো অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৩

২০২৪–এর শুরুতে তৃতীয়বারের মতো অ-নির্বাচন করে শেখ হাসিনা সরকার যখন আবারও ক্ষমতায় জেঁকে বসে, তখন সমাজে দুটো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। একদিকে সরকারি ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলো চিরস্থায়ী ক্ষমতা লাভের সম্ভাবনা দেখে উচ্ছ্বসিত এবং আরও বেশি উদ্ধত হয়; অন্যদিকে দুর্নীতি-লুণ্ঠন ও অত্যাচার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সমাজের সর্বস্তরে সৃষ্টি হয় এক নিদারুণ হতাশা, যাকে বলা যায় সামাজিক বিষণ্নতা।


বিষণ্নতার পেছনে ক্ষোভ ঠিকই আরও জমা হচ্ছিল। ক্রমপুঞ্জীভূত এই ক্ষোভের বহু কারণ ছিল। হাসিনা সরকার জিডিপির উচ্চ হার প্রবৃদ্ধি দেখালেও কর্মসংস্থানের প্রকট সমস্যা, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অর্থনৈতিক জীবনের টানাপোড়েন, জিনিসপত্রের অবিরাম মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণ জালিয়াতি, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অস্বাভাবিক উচ্চ ব্যয়ের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ লুট ও পাচার এবং বৈষম্য বৃদ্ধি মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। ক্ষোভের আরেকটি বড় কারণ হলো, জনগণের সমস্যা সমাধানে সরকারের ভয়ংকর নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি মানুষের ওপর সরকারি দলের লোকজনদের যথেচ্ছ অত্যাচার।


ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো বিভিন্ন লীগের নামে দখল, লুট, বন উজাড়, নদী বিনাশ চলছিল। এর সঙ্গে ফুটপাতের দোকান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পর্যন্ত ছিল চাঁদাবাজি আর নির্যাতন। কাউকে অপছন্দ হলে সরকারি বাহিনীর তুলে নেওয়া, মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে হুমকি, ক্রসফায়ার, গুম তো ছিলই।


তৃতীয় যে বিষয়টি আরও ক্ষোভ বাড়িয়েছে, তা হলো ভারতের সঙ্গে অধস্তন সম্পর্ক। সীমান্ত হত্যা চলেছে, পানির বাধা দিন দিন বেড়েছে। অথচ সেগুলোর সমাধান না করে তাদের প্রতি গদগদভাব ও একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ বছরের জুনে শেখ হাসিনা দুবার ভারত সফর করেন। দ্বিতীয় সফরে তিনি ট্রানজিটের সুবিধা আরও অনেক বিস্তৃত করেন। এসব চুক্তির বিষয়ে জনগণ কিছুই জানতে পারেনি। যখন কাজের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর বিভিন্ন লীগসহ পুলিশ–বিজিবি আক্রমণ, এমনকি নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শুরু করে, তখন এসব পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে, সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।



এ বছরের ৫ জুন কোটা সংস্কার নিয়ে এক মামলার সূত্রে আদালত তাঁর রায়ে পুরোনো কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ২০১৮ সালের পর আবার এই কোটা আন্দোলন শুরু হয়। জুন মাসে এই আন্দোলন ক্রমে বিস্তৃত হতে থাকে। ১ জুলাই থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়, সে সময় ঘটনাক্রমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও তাঁদের পেশাগত দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন।


এই ধর্মঘট ডাকে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এবং সব শিক্ষক সমিতি, যারা বরাবরই সরকারের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যের জন্য পরিচিত ছিল। তৃতীয়বার প্রতারণা ও জোরজবরদস্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে জনগণের দাবিদাওয়ার প্রতি সরকারের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল অনেক।


শিক্ষক বা শিক্ষার্থী উভয়েরই দাবি নিয়ে আলোচনার বদলে সরকারের পক্ষ থেকে হাস্যরস–মশকরা–অপমান চলছিল। এর চরম প্রকাশ ঘটল ১৪ জুলাই রাতে, সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিষোদ্‌গার, পাইকারি হামলা এবং ১৬ জুলাই থেকে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড। মানুষের পক্ষে এত কিছু মেনে নেওয়া কঠিন ছিল, তাই ঘটল জনবিস্ফোরণ।


২ আগস্ট ৩৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্রোহযাত্রা’ যেভাবে জনস্রোত তৈরি করে, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে যেভাবে মানুষের ঢল নামে আর ৪ আগস্ট হাসিনা–উত্তর রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য শিক্ষক নেটওয়ার্কের অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা যেভাবে জনসমর্থন পায়, তাতে হাসিনা সরকারের যে আর কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই, সেটাই স্পষ্ট হয়। সহস্র মানুষ খুন আর ২০ হাজারের অধিক জখম করার পরও সেই জনবিস্ফোরণ থামেনি, বরং এক অপ্রতিরোধ্য গণ–অভ্যুত্থানে তা টেনে নামায় সরকারকে, শেখ হাসিনা সদলবলে পালান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও