
সঙ্কটের কল্পনাতে...
বাচ্চার ব্যাগ বইছেন, জিনিসপত্র হাতের কাছে এগিয়ে দিচ্ছেন, চারবেলা নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন... ঘরে-বাইরে এ হেন অভিভাবকের সংখ্যা কম নয়। আসলে সন্তান বড় আদরের ধন। সমস্যা বা কষ্ট তাদের জীবনে আসুক, তা কোনও মা-বাবাই চান না। সন্তানের প্রতি সেই অতিরিক্ত চিন্তা থেকেই জন্ম হয় স্নোপ্লো পেরেন্টিংয়ের। বাচ্চার চলার পথ মসৃণ করতে তখন জীবনের খুঁটিনাটি সব কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অভিভাবকরা। সন্তানকে কষ্ট করতে হতে পারে, সেই আশঙ্কায় প্রতি মুহূর্তে তাকে আগলে রাখেন।
শুরুর কথা...
এর শুরুটা কিন্তু একদম ছোট বয়সেই হয়। স্কুল বা খেলার মাঠে বাচ্চার সঙ্গে বন্ধুবান্ধবের ঝগড়া মেটাতে এগিয়ে যান অনেক মা-বাবা। বাচ্চা যাতে বকুনি না খায়, তাই হোমওয়ার্ক করে দেন নিজেরাই। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বলছেন, “ক্রমশ সব সমস্যায় মা-বাবা ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকলে, এক সময়ে সন্তান তাদের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। ফলে প্রাপ্তবয়সে কর্মক্ষেত্রে হোক বা ব্যক্তিগত জীবনে, পদে পদে তাকে হোঁচট খেতে হয়।”
ফলস্বরূপ...
- আত্মবিশ্বাসের অভাব: জীবনে চলার পথে চড়াই-উৎরাই পেরোতেই হয়। কিন্তু এ ধরনের অভিভাবকত্বে বাচ্চার মধ্যে সে সবের মুখোমুখি হওয়ার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে না।
- আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব: কোনও রকম মানিয়ে নেওয়া বা মেনে নেওয়া, পরিশ্রম ছাড়াই সব পেয়ে যাওয়ায় বাচ্চা ক্রমশ স্বার্থপর হয়ে ওঠে। শত প্রয়োজন, সমস্যায় মা-বাবাও কিন্তু তখন সন্তানের সাহায্য পান না। পায়েল বলছেন, “এতে ভবিষ্যতে বিবাহিত জীবনেও সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময়েই জীবনসঙ্গীর প্রতি তাদের অত্যধিক আত্মকেন্দ্রিক আচরণ অশান্তি বয়ে আনে।”
- স্বাবলম্বী না হওয়া: অনেক ছেলেমেয়েই বাড়িতে এক গ্লাস জলও গড়িয়ে খায় না, সংসারের দায়িত্ব নেওয়া তো দূরস্থান। এদের যখন নিজের সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়, তখন তারা আর তা সামলাতে পারে না। পায়েল বলছেন, “এ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা প্রায়শই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ভবিষ্যতে অনেকেই হয়তো নিজের চেষ্টায় স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। আবার অনেককেই সারা জীবন এর ফল ভুগতে হয়। কিন্তু বাবা-মায়ের প্রতি অভিযোগ থেকেই যায়।”
- ট্যাগ:
- স্বাস্থ্য
- মানসিক বিকাশ
- শিশুর বেড়ে উঠা