জো বাইডেন একটা বই কিনলেন– তা নিয়ে কেন এত জল্পনা?
জো বাইডেন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শপথ না নেওয়া পর্যন্ত তিনিই প্রেসিডেন্ট থাকবেন। তবে ‘লেম ডাক’ বা ‘খোঁড়া হাঁস’ প্রেসিডেন্ট হয়ে। এই সময়টাতে তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিবেন, হোয়াইট হাউস ছাড়ার জন্য নিজের জিনিসপত্র গোছাবেন, টুকটাক ছোটখাট কাজ করবেন। কিন্তু দেশের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী কোনো ব্যাপারে তার কোনো ভূমিকা নেই, যদি না কোনো বড় রকমের সংকট দেখা দেয়। দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোও সাধারণত সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে সাবেক হওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রেসিডেন্টকে উপেক্ষা করে। তাদেরকে দোষ দেওয়া যায় না, নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের নানান ধরণের খবরের ভিড়ে স্থান বা সময় সংকুলান করা সহজ ব্যাপার নয়।
এত কথা বলার কারণ শুধু একটাই– প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২৪ সালের ২৯ নভেম্বর, থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের পরের দিন ম্যাসাচুসেটসের নান্টকেটের এক বুক স্টোরে নিজে গিয়ে একটা বই কিনেছেন। এই বই কেনাটাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ আর জল্পনা-কল্পনা চলছেই।
নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘নিউ ইয়র্ক পোস্ট’ বাইডেনের এই বই কেনা নিয়ে তাদের ২৯ নভেম্বর তারিখের অনলাইন এবং ৩০ তারিখের প্রিন্ট সংস্করণে ছবিসহ বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ করেছে। তারা মন্তব্য করেছে, “যারাই বাইডেনের হাতে এই বইটা দেখেছে তারা সবাই খুব বিস্মিত হয়েছে।” তারা হোয়াইট হাউসের মন্তব্যও চেয়েছিল, কিন্তু প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। লেখক রাশিদ খালিদিও ‘নিউ ইয়র্ক পোস্টে’র সঙ্গে খুব বেশি কথা বলতে চাননি, তিনি শুধু পাঁচটা শব্দ বলেছেন, “চার বছর দেরি হয়ে গেছে।”
রবার্ট মুরডকের ‘ফক্স নিউজ’ লিখেছে, “প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটা বই কিনেছেন যেটাতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের মুখে ইসরায়েলকে একটা ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও তিনি সবসময় ইসরায়েল রাষ্ট্রকে সহায়তা করে আসছেন।”
ইসরায়েলের সংবাদপত্র ‘জেরুসালেম পোস্ট’ নভেম্বরের ৩০ তারিখ শিরোনাম দিয়েছে, “বাইডেনেকে দেখা গেছে একটা ইসরায়েল বিরোধী বই হাতে, যেটাতে ইসরায়েলকে উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”
ব্রিটেনের পত্রিকা ‘ডেইলি মেইল’ লিখেছে– “প্রেসিডেন্ট বাইডেন ব্ল্যাক শুক্রবারের বাজারে গিয়ে ‘ফিলিস্তিনিদের উপর শত বছরের যুদ্ধ: বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতাবাদের আগ্রাসন ও প্রতিরোধ, ১৯১৭ তো ২০১৭’ বইটা কিনে এবং তা প্রদর্শন করে অনেক পত্রিকার শিরোনামে এসেছেন। এই বই কিনার ঘটনাটা ঘটেছে, বাইডেনের ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নেতানিয়াহু যখন অগ্রাহ্য করেন, তার পরপরই।”
বাইডেনের নামের আগে গাজায় গণহত্যার জন্য ‘জেনোসাইড’ শব্দটা গেঁথে গেছে। বিদায়বেলায় ‘জেনোসাইড জো’ নামে পরিচিতি পাওয়া বাইডেন কি অনুতপ্ত? নিজের দলের এত বড় হারের পরে তিনি কি বুঝতে পারছেন গত নির্বাচনে তরুণদের ও মুসলমানদের ভোট ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য কি-যে প্রয়োজন ছিল! বাইডেন সেদিন যে বইটা কিনেছেন এটা যদি চার বছর আগে কিনতেন, তাহলে গাজা যুদ্ধ কি অন্য রকম হতো? তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি চিরকালই ইহুদিবাদের ঘোর সমর্থক ছিলেন, এই বইটা পড়ার পর বাইডেন কি মত পাল্টাবেন? নাকি পুরোটাই তার লোক দেখানো।
বাইডেনের এই একটা বই কেনা নিয়ে কেন আমরা এত সব জল্পনা-কল্পনা করছি? সাধারণত একজন ক্রেতা যখন একটা বই কিনেন, দোকানদার টাকা নিয়ে বইটা একটা থলিতে ঢুকিয়ে ক্রেতার হাতে তুলে দেন। ক্রেতা থলেটা নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে আসেন। কি বই, কিসের বই, কারো জানার উপায় নেই, সম্ভবত প্রয়োজনও নেই। কিন্তু বাইডেন বইয়ের থলেটা দোকানের ভেতরেই ফেলে দিলেন, বইটা তিনি তার বুকের নিচে ধরে এমন ভাবে বের হয়ে আসলেন যেন বাইরে দাঁড়ানো সব সাংবাদিকেরা ও অন্যান্য জনগণ সবাই বইটার নামধাম ও ওপরের বড় লেখাগুলো ভালোভাবে দেখে। দেখা গেল বাইডেনের হাতে যে বইটি তার নাম– ‘দ্য হান্ড্রেড ইয়ার্স ওয়ার উইথ প্যালেস্টাইন’ (‘ফিলিস্তিনিদের ওপর শত বছরের যুদ্ধ’), লেখক রাশিদ খালিদি যিনি এককালে ফিলিস্তিনি লিবারেশন সংস্থার সদস্য ছিলেন, বর্তমানে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এই বইটা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদিবাদীদের সহিংসতা ও ঔপনিবেশকতার একটা প্রামাণ্য দলিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জল্পনা-কল্পনা
- বই ক্রয়
- জো বাইডেন