ডি-৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব
মিসরের কায়রো শহরে অনুষ্ঠিত ১১তম ডি-৮ সম্মেলন (D-8 Summit) দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা (South-South Cooperation)-এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। ডি-৮ জোটের বর্তমান চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ তার নেতৃত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ডি-৮ বা ডেভেলপিং এইট একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ভিত্তিক জোট, যা ১৯৯৭ সালে গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্ক। এই জোটের লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা।
বাংলাদেশ ডি-৮-এর বর্তমান চেয়ার হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। ডি-৮ ইয়ুথ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন, ‘সদস্য দেশগুলোর অকুণ্ঠ সমর্থন ছাড়া এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হতো না।’ বাংলাদেশ তার চেয়ারম্যানশিপে ডি-৮ এর অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং সহযোগিতাকে শক্তিশালী করেছে।
ডি-৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলো বেশ উচ্চাভিলাষী। দেশের বাণিজ্য প্রসার, প্রযুক্তি বিনিময়, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে ডি-৮ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি আরও বাড়ানো সম্ভব। ডি-৮ সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নের পথ সুগম করা।
বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রযুক্তি আদান-প্রদান এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন অংশীদারিত্ব স্থাপন। বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল—
বাণিজ্য বৃদ্ধি: ডি-৮ এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করা।
খাদ্য নিরাপত্তা: খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ।
শিল্প ও প্রযুক্তি উন্নয়ন: ডিজিটাল প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা।
জলবায়ু পরিবর্তন: ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে জলবায়ু তহবিল বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন।
সম্মেলনের আগে ড. ইউনূস মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে নতুন প্রেসিডেন্টপ্রাসাদ পরিদর্শনে যান। মিসর বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ডি-৮ প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের প্রভাব বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। ১১তম ডি-৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের নেতৃত্বে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে।
শুল্কমুক্ত বাণিজ্য: বাংলাদেশের উদ্যোগে ডি-৮ সদস্য দেশগুলো শুল্ক কমানোর বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
জলবায়ু তহবিল: সম্মেলনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়, যা সদস্য দেশগুলো সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করে।
খাদ্য নিরাপত্তা: বাংলাদেশের কৃষি প্রযুক্তি ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।