সরকারি বেতনে বৈষম্য দূর করবে কে
এর আগে কোনো লেখার এ রকম প্রতিক্রিয়া হয়নি। সত্যিকার অর্থে এটিকে ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এর কিছুটা এসেছে ভুল–বোঝাবুঝি থেকে। আর কিছুটা এসেছে জীবনযাপনের নির্মম বাস্তবতা থেকে।
আমাদের কলামের শিরোনাম ছিল, ‘তাঁরা (সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা) মহার্ঘ ভাতা, অন্যরা টিসিবি ট্রাকের লাইনে দাঁড়াবেন?’
অনেকেই এটাকে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার বিরোধিতা মনে করেছেন। আসলে আমরা কারও মহার্ঘ ভাতার বিরোধিতা করিনি। আমরা বলেছি, মহার্ঘ ভাতার সুফল পাবেন বড়জোর ৭০ লাখ মানুষ। এর বাইরে যে বিপুল জনগোষ্ঠী আছে, তাঁদের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে।
একজন পাঠক লিখেছেন, ‘আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি ২০২৩ সালে। সব মিলিয়ে আমার বেতন ১৮ হাজার ৩৪০ টাকা। এই টাকা দিয়ে মা–বাবাসহ সাতজনের পরিবার পুরো মাস কীভাবে চলব?’ পৃথিবীর সব দেশেই শিক্ষকদের আলাদা বেতনকাঠামো থাকে। তাঁদের বেশি বেতন–ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষকদের বেতন–ভাতা কম দেওয়া হয়। প্রাথমিক থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত।
আরেকজন লিখেছেন, ‘১১-২০ গ্রেডের কর্মকর্তা কত বেতন পান, তা কি ধারণা রাখেন? গাড়ি বা কার লোন কত শতাংশ চাকরিজীবী পান, তা কি আপনি জানেন? যারা সৎভাবে চাকরি করে, অবৈধ উপার্জন করে না, তারা কী ধরনের মানবেতর জীবন যাপন করছে, তা কি আপনি অনুভব করার মতো মানসিকতা রাখেন?’
আমাদেরও প্রশ্ন, কেন এমনটি হবে? একজন সরকারি বা বেসরকারি খাতের কর্মী কেন বেতনের অর্থ দিয়ে সংসার চালাতে পারবেন না? সমস্যাটা তো মহার্ঘ ভাতা নয়। সরকারের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির। সরকার ওপরের লোকদের বেশি বেশি সুযোগ দিয়ে খুশি করে আর নিচের মানুষেরা দিনরাত পরিশ্রম করেও ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন না।
একজন পাঠক সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের বেতনবৈষম্যের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘একটি সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে কর্মরত থেকে দশম গ্রেডে সর্বসাকল্যে ২৫ হাজারের মতো বেতন পাই। আমার প্রাইভেট ব্যাংকের কলিগরা এখন ৬০ হাজারের মতো বেতন পান। আমি পাপ করেছি সরকারি চাকরির মোহে বিভ্রান্ত হয়ে।’
চতুর্থজনের মন্তব্য, ‘একজন দিনমজুরের দৈনিক মজুরি ন্যূনতম ৭০০–৮০০ টাকা! যারা রিকশা–ভ্যান চালায়, তারাও দিনে কমপক্ষে ৮০০ টাকার ওপরে উপার্জন করে! সম্প্রতি পোশাকশ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে! সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে! বছরে বৃদ্ধি হবে ৯ শতাংশ।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘আপনি শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের কথা বলেছেন ঘুষ খায়, কিন্তু অনেক স্বায়ত্তশাসিত সরকারি পদ আছে; সাধারণ কর্মচারী, তাঁদের কোনো সুযোগ নেই, অল্প বেতনে সংসার চলে না। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০, মোট বেতন ৯ হাজার টাকা, আর কোনো ভাতা নেই, তারা ৯ হাজারে কীভাবে সংসার চালাবে?’
আমরাও মনে করি, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। এই বঞ্চনার অবসান অবশ্যই চাই। শিক্ষায় সরকারি–বেসরকারি কিংবা এমপিওভুক্ত ও ননএমপিওভুক্ত এই শ্রেণিভেদ থাকা উচিত নয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বেতন বৈষম্য নিরসন