বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে লেকচার দেওয়া ভারতের মানায় না

প্রথম আলো পার্থ এস ঘোষ প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:১৭

মাত্র পাঁচ মাস আগেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এমন নিম্নগামী অবস্থা কল্পনাও করা যেত না। সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার ভারতের সিদ্ধান্ত এবং পরোক্ষভাবে তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর বিতর্কিত মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া।


এসব ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরক্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকা সফর করেছেন। সেই সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর স্বভাবসুলভ ভদ্রতা বজায় রেখে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমাদের জনগণ উদ্বিগ্ন, কারণ তিনি [নয়াদিল্লি থেকে] অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে।’


বাংলাদেশে কিছু সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনা যে ভারতের হিন্দুদের আবেগে নাড়া দেবে, তা অনুমানযোগ্য। আর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তি বিজেপি, আরএসএস এবং অন্যান্য অনেক গোষ্ঠী তো এর জন্য সদাপ্রস্তুত। তারাও প্রতিশোধের দাবিতে সরব হয়েছে। উত্তর প্রদেশের (ইউপি) আগ্রাসী বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঙ্গে তাঁর রাজ্যের সাম্ভল শহরের মসজিদ-সংক্রান্ত সংঘর্ষের সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন। সেই ঘটনায় চারজন মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন।


৫ ডিসেম্বর অযোধ্যায় রামায়ণ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে (৬ ডিসেম্বর হলো বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বার্ষিকী) আদিত্যনাথ বলেন, ‘৫০০ বছর আগে বাবরের এক সেনাপতি অযোধ্যায় যা করেছিল, ঠিক সেই একই ঘটনা ঘটেছিল সাম্ভলে এবং একই ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশেও।’



এমনকি সাধারণত সাম্প্রদায়িকভাবে শান্তিপূর্ণ রাজ্য যে পশ্চিমবঙ্গ, সেখানেও বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাপ অনুভূত হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি আর শেখ হাসিনা বা আদিত্যনাথের চেয়ে পিছিয়ে থাকবেন কেন? মমতাও উদ্ভট দাবি করেছেন যে জাতিসংঘের উচিত বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।


তাঁর এই হুংকারের পাল্টা পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির প্রধান ব্যক্তিত্ত্ব শুভেন্দু অধিকারী তীব্র সমালোচনা করলেন মমতার ‘মুসলিম-সমর্থক’ রাজনীতির বিরুদ্ধে। অধিকারী হুমকি দিয়েছেন, যদি ভারতের হিন্দুরা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপন্থী (তাঁর ভাষায় ‘অ্যান্টি-রাজাকার’) শক্তি একত্র হয় তাহলে এই সরকারকে টলিয়ে দিতে সময় লাগবে না।


অধিকাংশ ভারতীয়ই যেন বুঝতে পারছেন না যে ভারতের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বাংলাদেশের পরিস্থিতির চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন নয়। হিন্দু আধিপত্যবাদী বিজেপি মনে করে, ভারত খুবই শক্তিশালী। ভারত এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা, জিডিপি এবং সামরিক শক্তির তিন-পঞ্চমাংশের সমান। তাই তাদের মুসলিমবিরোধী ঘৃণা ছড়ানোর একচেটিয়া অধিকার রয়েছে। যদি মুসলিম বা বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো কোনোভাবে হিন্দুবিরোধী মনোভাব প্রদর্শন করে, তবে বিজেপি নিন্দা জানাতে কোনো বিলম্ব করে না। অথচ ভারতের ২০ কোটি মুসলিম যে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে পরিণত হয়েছে, তা নিয়ে বিজেপি/আরএসএসের কোনো মাথাব্যথাই নেই। বিজেপিকে বুঝতে হবে যে ক্ষমতার পাশাপাশি দায়িত্ববোধও থাকা উচিত।


বাংলাদেশি হিন্দুরা আসলে কতটা সহিংসতার শিকার হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা কঠিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভুয়া খবরের আধিক্যের এই সময়ে প্রতিটি সংবাদকেই সন্দেহের চোখে দেখতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতির একজন ছাত্র হিসেবে আমি বলতে পারি, ভারতীয় গণমাধ্যমে যা প্রকাশিত হয়, তা অতিরঞ্জিত এবং ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী শাসনব্যবস্থাকে সন্তুষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শেখ হাসিনা তাঁর ভারতীয় আশ্রয়দাতাদের খুশি করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য রাজনীতি করছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও