জগাখিচুড়ি
বাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘জগাখিচুড়ি’। পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে আমরা জগাখিচুড়ি শব্দটি ব্যবহার করি। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, আমাদের দৈনন্দিন কথ্যভাষায় জগাখিচুড়ি শব্দটি আহার্য হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে তালগোল পাকানোর প্রতিশব্দ হিসেবে পরিণত হয়েছে। সচরাচর বৃষ্টির দিন ভুনাখিচুড়ি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু আবহাওয়ার তারতম্যভেদে জগাখিচুড়ি খেয়ে কেউ কোনো দিন অফিস-আদালত-স্কুল-কলেজে গিয়েছেন এমনটা শুনিনি। জগাখিচুড়ি কীভাবে তার খাদ্যগুণ হারিয়ে তালগোল পাকিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছে, আজ জানব তার আদ্যোপান্ত।
জগা এবং খিচুড়ি শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে জগাখিচুড়ি শব্দটি। এটি বাংলা শব্দ এবং বিশেষ্য পদ। আক্ষরিকভাবে জগাখিচুড়ি শব্দের অর্থ হলো বিবিধ তরিতরকারি মিশিয়ে রাঁধা খিচুড়ি। এর আলংকারিক অর্থ হলো বিবিধ বিসদৃশ বস্তুর সংমিশ্রণ বা একত্র সমাবেশ। জগাখিচুড়ি একসময় আহার্যই ছিল কিন্তু কালের পরিক্রমায় জগাখিচুড়ি তার আহার্যগুণ হারিয়ে নেতিবাচক একটি শব্দালংকারে পরিণত হয়েছে। তবে জগাখিচুড়ির ব্যুৎপত্তি বিষয়ে দুটি মত পরিলক্ষিত হয়, একটি হলো ভারতের উড়িষ্যার পুরী শহরে জগন্নাথদেবের মন্দিরে প্রতিদিন ভক্তদের মধ্যে যে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়, সেটিই জগাখিচুড়ি। আরেকটি মত হলো, জনৈক জগাই ব্রাহ্মণের রান্না করা অপেক্ষাকৃত স্বল্প মূল্যে কেনা চাল-ডালে মেশানো খাদ্যবস্তুটিই হলো জগাখিচুড়ি।