মূল্যস্ফীতিটা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ
এবার বৈশ্বিক ক্ষুধাসূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু এখনো মাঝারি মাত্রার ক্ষুধা আছে। এখানে অগ্রগতি হওয়াটা কী রকম এবং মাঝারি মাত্রার ক্ষুধা বলতে আমরা কী বুঝব?
গোলাম রসুল : গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২৪-এ ১৮৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের র্যাংক ৮৪ হয়েছে এবং মডারেট লেভেলের হাঙ্গারে স্কোর হচ্ছে ১৯.৪। এখন এই মডারেট বলতে কী বুঝি বা এটা কী? আসলে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ৫ স্কেলে হয়। স্কেল হচ্ছে ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত। লো হাঙ্গার, মডারেট হাঙ্গার, সিরিয়াস হাঙ্গার, অ্যালার্মিং হাঙ্গার, এক্সট্রিমলি অ্যালার্মিং হাঙ্গার। যারা ০ তারা লো হাঙ্গার। ০ থেকে ৯.৯ এর নিচে লো হাঙ্গার। লো হাঙ্গার মিনস তারা সবচেয়ে ভালো। যারা ১০ থেকে ১৯.৯ এর মধ্যে তারা হচ্ছে মডারেট হাঙ্গার। আর যারা ২০ থেকে ৩৪.৯ তারা সিরিয়াস হাঙ্গারে আছে। আমরা গত বছর সিরিয়াস হাঙ্গারের গ্রুপে ছিলাম, এবার সিরিয়াস হাঙ্গার থেকে মডারেট হাঙ্গারে গেলাম। এরপর ৩৫ থেকে ৪৯.৯ হলো অ্যালার্মিং হাঙ্গার আর ৫০-এর ওপর হলে সেটা এক্সট্রিমলি অ্যালার্মিং হাঙ্গার যেটা আফ্রিকার কিছু দেশে আছে। গত বছর আমরা ছিলাম ২০ দশমিক সামথিং। এবার আমরা ২০ থেকে নেমে ১৯.৯ গ্রুপে চলে এসেছি। যেহেতু আমরা মডারেট গ্রুপ এ জন্য বলা হচ্ছে আমাদের কিছু উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে উন্নতিটা খুব বড় না। কারণ, আমাদের দেশে এখনো কিন্তু অপুষ্টি সমস্যা আছে। এই ইনডেক্স করা হয় ৪টা ইন্ডিকেটর দিয়ে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার। আমাদের প্রায় ১২ শতাংশ লোক অপুষ্টিতে ভুগছে। এই নাম্বারটা অনেক বড়, তারপর আমাদের বাচ্চাদের ওজন কম। আমাদের প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন বাচ্চা ক্ষুধাজনিত কারণে খাটো। আমাদের এখনো ২.৯শতাংশ শিশু ৫ বছরের আগে মারা যাচ্ছে। তো এই ইন্ডিকেশনগুলো এখনো আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২০৩০ সালের মধ্যে যে আমাদের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল, সেখানে আমাদের জিরো হাঙ্গার হতে হবে। জিরো হাঙ্গারে যেতে আমাদের সরকারি এবং বেসরকারি সবাই মিলে অনেক সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে।
বেশ কিছুদিন ধরে সারা বিশ্বেই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টা আলোচনায় ছিল বা এখনো আছে। বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার নিরিখে বাংলাদেশের বাস্তবতাটা কেমন?
গোলাম রসুল : বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টা কিন্তু আমাদের জন্য এখনো একটা চ্যালেঞ্জিং হিসেবে রয়ে গেছে। গত প্রায় ২ বছর থেকে জনগণ কিন্তু উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে। আপনি জানেন, ডিসেম্বরের ৫ তারিখে বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস নভেম্বর মাসের যে মূল্যস্ফীতি দিয়েছে সেখানে দেখা গেছে আমাদের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩.৮০। গত কয়েক বছর থেকে আমাদের এই খাদ্য মূল্যস্ফীতিটা কিন্তু ৯ শতাংশ বা ১০ শতাংশের ওপরে যাচ্ছে। ফলে দেশের যে দরিদ্র জনগণ বা স্বল্প আয়ের লোকজন, তাদের জন্য এই উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতিটা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মূল্যস্ফীতি
- খাদ্য নিরাপত্তা