আইসিটি আইন: আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি এসেছে, আরও পরিবর্তন প্রয়োজন
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এর সংশোধনীসংবলিত অধ্যাদেশটি প্রকাশিত হয়েছে। যাঁরা ন্যায্য ও বিশ্বাসযোগ্য বিচারে আগ্রহী, তাঁদের আনন্দিত হওয়ার মতো এতে অনেক কিছু আছে। সেই সঙ্গে কিছু আছে হতাশ হওয়ার মতোও।
নতুন অধ্যাদেশের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক কী আছে, সেদিকে তাকানোর আগে সংশোধনীতে ঘাটতি থেকে যাওয়া উল্লেখযোগ্য একটি ব্যাপারের দিকে জোর দেওয়া দরকার। আর তা হলো, এখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল রাখা হয়েছে।
সরকার যদি বিচারপ্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা চায়, তাহলে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার এ সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী ফল হবে নেতিবাচক।
প্রথমত, এর অর্থ হলো সরকার ও ট্রাইব্যুনাল জাতিসংঘ বা কোনো ইউরোপীয় দেশ থেকে কোনো সাহায্য পাবেন না। পেলেও তা হবে খুবই সীমিত।
দ্বিতীয়ত, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সময় সংগ্রহ করা কোনো প্রমাণ জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের কাছে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তৃতীয়ত, অনেক আন্তর্জাতিক আইনজীবীর বিচারকাজে প্রসিকিউশনকে সহায়তা করার সম্ভাবনা ছিল, তাঁরা এখন এতে অংশ নিতে অনিচ্ছুক হতে পারেন।
চতুর্থত, এর ফলে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এখন বিচারপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পক্ষে সরকারের যৌক্তিকতা কী? সরকার বিশ্বাস করে, দেশের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলোর (প্রাথমিকভাবে ছাত্র ও প্রধান রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াতে ইসলামী) পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জন-অভিপ্রায় মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে।
সরকার মনে করে, মৃত্যুদণ্ডের বিধান অপসারণের কোনো চেষ্টা করলে তার ওপর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ‘নমনীয়’ হওয়ার অভিযোগ আসবে এবং এমন কোনো দাবি অত্যন্ত নেতিবাচক রাজনৈতিক পতন ঘটাবে।
যাহোক, মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা নিয়ে জনগণের বা রাজনৈতিক দলগুলোর মেজাজ সম্পর্কে সরকারের উপলব্ধি যে যথার্থ, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আর তা সঠিক হলেও সরকার এই বিচারে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে কোনো জনসংলাপ করার চেষ্টা করেনি। এই দণ্ড অপসারণই যে বিচারকে এগিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়, এ কথা বোঝানোরও কোনো চেষ্টা হয়নি।
সরকার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত ঘোষণা করতে পারে—এ বিষয় আলোচিত হয়েছে। তবে তা করার মাধ্যমে সরকার যদি উল্লেখযোগ্য সুবিধা অর্জন করতে চায়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো সময়ে নয়, এখনই সেই ঘোষণা করার সময়। আর এর সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা করা।